ঢাকা: যেতে সময় লেগেছে প্রায় ৯ ঘণ্টা, যার ৫ ঘণ্টাই কেটেছে যানজটে। আর ফিরে আসতে পারলাম যানজটে থাকার সময়ের চেয়েও এক ঘণ্টা কমে মোট চার ঘণ্টায়।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা। রাজবাড়ী থেকে সৌহার্দ্য পরিবহনে গাবতলী বাস টার্মিনালে নেমেই এমন মন্তব্য ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফেরা তৌহিদ হোসেনের।
তৌহিদ বাংলানিউজকে বলেন, যানজট ও ভোগান্তিহীন এমন সড়ক গত দশ বছরেও দেখিনি। যেতে ৫ ঘণ্টা যানজটে থাকার ভোগান্তি নিমিষেই ভুলে গেছি আসার সময় যানজট না পেয়ে।
তৌহিদের সঙ্গে সুর মেলালেন একই বাসে রাজবাড়ী থেকে আসা সুমন-রেহানা দম্পতিও। জানালেন নিবিঘ্নে ফিরে আসার উচ্ছ্বাস। সেই সঙ্গে ধন্যবাদও।
সুমন বলেন, যানজট মিলিয়ে সাড়ে ৮ ঘণ্টা আর বাসের ইঞ্জিন কাভারে (চালকের পাশে মেশিনের ওপর সিট) বসে বাড়ি ফেরা। তার ওপর বাড়তি ভাড়া। আসতে নেই যানজট। পরিবারের সবাইকে ছেড়ে আসতে কষ্ট হচ্ছে। তবে আসতে বিড়ম্বনা না থাকায় মনে হচ্ছে ঈদের রেশ কাটেনি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে এভাবে ভোগান্তিহীন আর যানজট ছাড়াই ঢাকায় ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন গাবতলীতে আসা যাত্রীরা।
গাবতলী টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে জানা গেছে, ঈদের পরদিন থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে। ৩-৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ চাপ থাকবে।
সকাল সাড়ে ৯টায় যশোর থেকে দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে গাবতলীতে নামেন সরকারি চাকরিজীবী আমিনুল ইসলাম। তার চোখে-মুখেও ছিল হাসি।
বললেন, ঈদে ভোগান্তি হবে মনে করে ঈদের ৫ দিন আগে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেই। ঈদের আগের দিন যেতে ৮ ঘণ্টা যানজট, তার ওপর ভোগান্তি ছিল।
![](files/September2015/September29/Gabtoli_Pasenger1_143549392.jpg)
আসতে কোনো ভোগান্তি না থাকায় অত্যন্ত খুশি তিনি। জানালেন, আগে কাউন্টারে গিয়ে দেখেছি, যানজট হবে কি-না। নিশ্চিত হওয়ার পর গাড়িতে উঠেছি।
দু’দিন পরই ছেলেদের স্কুল খুলবে। তার ওপর যানজট না থাকায় আগেই চলে এলাম। তবে যানজটহীন সড়কে আসতে পেরে ঈদের আনন্দ এখনো রয়ে গেল- যোগ করলেন আমিনুল।
যানজট না থাকায় সময়মতো গাড়ি ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে। আবার সময়মতো বিভিন্ন জেলায় ফিরে যেতে পারছে। তবে যশোর-খুলনা জেলার গাড়ির চাপ বেশি রয়েছে।
গাবতলীর শ্যামলী বাস কাউন্টার মাস্টার আশিক সাব্বির বাংলানিউজকে জানান, যশোর, খুলনা, বরিশাল এবং সাতক্ষীরা জেলা থেকে ঢাকায় আসার ক্ষেত্রে যাত্রী চাপ বেশি।
যানজট না থাকায় প্রতি ১৫ মিনিট পর পর এসব জেলা থেকে গাড়ি ঢাকায় ঢুকছে। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিতে দেরি হলে সময় একটু বেশি লাগছে।
সাব্বির বলেন, নওগাঁ, পঞ্চগড়, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় আসতে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যানজট না থাকায় নিবিঘ্নে আসতে পারছেন যাত্রীরা।
তার মতে, ঈদের আগে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট ছিল সেখানে কোনো যানজট না থাকায় ঢাকায় ফেরত যাত্রীরা খুশি। উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের চাপ থাকবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত।
গাবতলী এসপি গোল্ডেন লাইনের কাউন্টার ইনচার্জ আল আমিন বাংলানিউজকে জানান, সাতক্ষীরা থেকে আধা ঘণ্টা পর পর গাড়ি আসছে।
ঈদের আগে যেখানে প্রতি গাড়ি ৭-৮ ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতো, ঈদের পরদিন থেকে কোনো গাড়ি যানজটে বসে থাকেনি, এসেছে সময়মতোই।
তিনি জানান, দু’ একদিন পরই খুলবে স্কুল-কলেজ। এজন্য যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। এ চাপ আগামী ৩-৪ অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে।
তবে ঈদের আগের মতো ঢাকা ফেরত যাত্রীদের কোনো অভিযোগ নেই বলেও জানান আল আমিন।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, যশোর-খুলনা রুটে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ বেশি। যানজট না থাকায় সময়মতো গাড়ি আসতে পারছে।
জেলা থেকে ৩০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পর পর গাড়ি ছাড়ছে। আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ চাপ থাকবে বলেও জানান মিন্টু।
অন্যদিকে, গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, সড়কে যানজট না থাকায় ঈদের ৫ম দিনও রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও নেই কোনো অভিযোগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
আরইউ/এএসআর