ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘তোরা ত্যাল হইয়াও গ্যাসের ভঙ্গ ধরছো’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
‘তোরা ত্যাল হইয়াও গ্যাসের ভঙ্গ ধরছো’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গ্যাসের দাম বাড়ানোয়  ঢাকা মহানগরী এলাকায় বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। নগর পরিবহনে বাসের ভাড়া প্রতি কিলেমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে।

  তবে এর চেয়েও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বাস পরিবহনে। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে গিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন যাত্রী, বাসের চালক ও  কন্ডাক্টর।

বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের হালচাল জানতে তৃতীয় দিন শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর)  জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বিকল্প অটো সার্ভিসের যাত্রী হয়েছিলাম। কারওয়ানবাজারে মতিঝিল থেকে মিরপুরগামী এক যাত্রীর কাছে ২৯ টাকা ভাড়া চেয়ে বসেন কন্ডাক্টর। ওই যাত্রী ২৪টা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন।

এসময় যাত্রী ও কন্ডাক্টরের মধ্যে চলতে থাকে বিতর্ক। কন্ডাক্টরের পক্ষে যোগ দেন ড্রাইভার ও হেলপার। অপর পক্ষে বাসশুদ্ধ যাত্রী।

কন্ডাক্টর বলেন, ভাড়া এহন ২৯ ট্যাকা! ২৪ ট্যাকার দিন শ্যাষ! গ্যাসের দাম বাড়ছে।

এমন সময় এক যাত্রী ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন,  তোরা(কন্ডাক্টর) ত্যাল হইয়া গ্যাসের ভঙ্গ (অভিনয়) ধরছো। যহন যেটা বাড়ে তোরা সেটাই কস। এহন গ্যাসের দাম বাড়ছে, তোগোর ত্যালের গাড়ি গ্যাস  হইয়া গেসে। ত্যালের দাম বাড়লে তোগোর গ্যাসের গাড়ি ত্যাল হয়। গ্যাসের দাম বাড়লে গ্যাস হয়। তোগোর চরিত্রই পরিবর্তন হয়। একেক সময় একেক ভঙ্গ ধরোছ তোরা(কন্ডাক্টর)।

সাংবাদ কর্মী হিসেবে বাড়তি ভাড়া দাবির কারণ জানতে চাইলে কন্ডাক্টর দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মামা ২৭শ’ ট্যাকার গ্যাস লইলে দিন পার হয় না। আগে ২১শ’ ট্যাকায় দিন গ্যাছে গা।

কন্ডাক্টরের এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাসের যাত্রীরা একই সুরে বলতে থাকেন, যাত্রী প্রতি ৫ টাকা ভাড়া বাড়ে কোন হিসেবে। ভাড়া আরও কমানো দরকার।

এর পর কন্ডাক্টর যাত্রীদের প্রশ্নের কোনো যৌক্তিক উত্তর দিতে পারেননি। তবে বিকল্প অটো সার্ভিসটি গ্যাস চালিত ছিল।

সরেজমিনের দেখা গেছে, ঢাকার মধ্যে দূরত্বভেদে ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী-গাবতলীগামী ৮ নাম্বার লোকাল সার্ভিসে ২৫ টাকার বদলে ৩০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মিরপুর-১ থেকে গুলিস্তানগামী দিশারি পরিবহনে ২২ টাকার থেকে তিন টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

তবে গ্যাস চালিত শিকড় পরিবহনে এখনও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। এছাড়া মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ীগামী কিছু পরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে ভাড়া বাড়ানোর জন্য অনেক তেল চালিত পরিবহনও যেন মুখিয়ে আছে। আব্দুল্লাহপুর বা এয়ারপোর্ট থেকে কুড়িল, ভাটারা, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, মালিবাগ, পল্টন, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চলাচল করে ছালছাবিল পরিবহন। এই বাসটি তেল চালিত। অথচ এটিও যেন ভাড়া বৃদ্ধির জন্য মুখিয়ে আছে।

বাসের কন্ডাক্টর বলেন, ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। সামনে হবে!’

আপনার বাস কিসে চলে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তেলে চলে।

কয়েকটি পরিবহনে দেখা গেছে, চালকের বাম পাশের গ্লাসে মোটরযান পরিদর্শক আবুল
হাসান ও বিআরটিএ’র উচ্চমান সহকারী আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত ভাড়া বৃদ্ধির চার্ট সাঁটানো। এতে সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা হিসাব করে চার্ট প্রস্তুত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৫
এমআইএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।