ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মানবতাবিরোধী অপরাধ

এমপি হান্নানসহ আটজনের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ১৭ নভেম্বর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
এমপি হান্নানসহ আটজনের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি  প্রতিবেদন ১৭ নভেম্বর এম এ হান্নান

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ হান্নানসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে এ মামলার মোট আট আসামির বিরুদ্ধে আগামী ১৭ নভেম্বর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



রোববার (৪ অক্টোবর) গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদ এবং ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতারকৃত ডা. খন্দকার গোলাম সাব্বির ও মিজানুর রহমান মিন্টুকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে অপর আসামি হরমুজ আলীকে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়ার পথে তাকে বহনকারী পুলিশের গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়লে আহত হন তিনি। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে হাজির করা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) প্রসিকিউশনের আবেদনক্রমে এ মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ওইদিনই ঢাকায় গ্রেফতার হন এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদ। ময়মনসিংহ সদর ও ত্রিশালে গ্রেফতার হন বাকি তিনজন। পলাতক তিন আসামির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।  

শুক্রবার (২ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল বন্ধ থাকায় চার আসামিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর(সিএমএম)আদালতে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক তাদের চারজনকে খণ্ড নথিমূলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে রোববার ওই খণ্ডনথি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো ও আসামিদেরকে হাজির করার নির্দেশ দেন।

রোববার ট্রাইব্যুনালে আট আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে তিনমাসের সময়ে আবেদন জানান প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। তিনি শুনানিতে জানান, আসামির বিরুদ্ধে গত ২৮ জুলাই থেকে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।

ট্রাইব্যুনালে আরও ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তাপস কান্তি বল এবং আসামি ডা. খন্দকার গোলাম সাব্বিরের আইনজীবী কুতুবউদ্দিন আহমেদ।

বাকি আসামিরা যেকোনো সময় পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন বলে ট্রাইব্যুনাল জানালে তারা জানান, তারা আইনজীবী দেবেন।

এরপর চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মাদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে প্রসিকিউশনকে আট আসামির বিরুদ্ধে আগামী ১৭ নভেম্বর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

গত ১৯ মে এমপি হান্নানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন। ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতে আন্তজার্তিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩ (২) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন আদালতের বিচারক আহসান হাবিব।

মামলায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ছাড়াও জামায়াত নেতা ফকরুজ্জামান ও শহরতলীর গলগণ্ডা এলাকার গোলাম রব্বানীকে আসামি করা হয়। পরে তদন্তে আরও পাঁচজনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় এ মামলার আসামি হয়েছেন মোট আটজন।

বাদিনী ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর মুন্সীপাড়া এলাকার শহীদজায়া রহিমা খাতুন মামলায় অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তার লক্ষ্যে এম এ হান্নান ময়মনসিংহ জেলা শান্তি কমিটি গঠন করে এর সাধারণ সম্পাদক হন।   ফকরুজ্জামান ও গোলাম রব্বানি আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্য হিসেবে হান্নানের সহযোগী ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা শহরের নতুন বাজারে অবস্থিত এম এ হান্নানের নিজ বাসভবন, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো টর্চার সেলের দায়িত্বে থেকে মুক্তিকামী সাধারণ নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করে মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ফেলে রাখেন।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমানকে আসামি আব্দুল হান্নান তাদের সহযোগী রাজাকারদের সহযোগিতায় গৌরীপুর থানার ভাঙনামারী চর থেকে ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর বিকেল চারটার সময় ধরে আনেন। পরে ময়মনসিংহ শহরের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় টর্চার সেলে প্রকাশ্য দিবালোকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমানের দুই চোখ উপড়ে ফেলে ও ডান হাত ভেঙে দিয়ে নিজে গুলি করে হত্যা করেন এম এ হান্নান। আসামিরা সহযোগী রাজাকারদের নিয়ে আব্দুর রহমানের বাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মনোরঞ্জনের জন্য ময়মনসিংহ শহরের যৌনপল্লী থেকে নারীদেরকে ধরে এনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে সরবরাহ করেন। পরে এসব নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলে দেওয়া হয়।

এসব আসামিরা ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার খাগডহর ইউনিয়নে মাইজপবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান আতাকে ধরে নতুন বাজারে এম এ হান্নানের নিজ বাসায় বেয়নেট চার্জসহ অমানুষিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলে দেন।

ময়মনসিংহ শহরের কাঁচিঝুলি এলাকার শামসুদ্দিন আহমেদ টেপা মিয়ার পুত্র ধারা, কলেজ রোড এলাকার আব্দুল খালেকের পুত্র রমজান, ডালপট্টি এলাকার আব্দুর রশিদ, চরপাড়ার নিজাম, মুমিনুন্নিসা কলেজের পেছনের সুরুজ আলী, মাইজবাড়ির আতা, আকুয়া হাজিবাড়ীর সুরুজ এবং ধোপাখোলা মোড়ের অ্যাথলেট শাহেদ আলীকে আলবদর বাহিনীকে দিয়ে ধরে এনে আসামিরা জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর টর্চার সেলে বেয়নেট চার্জ ও গুলি করে হত্যা করে মরদেহ ব্রক্ষপুত্র নদে ফেলে দেন আসামিরা।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, মামলার সাক্ষী খন্দকার আব্দুল গণির সহোদর ছোট ভাই খন্দকার আব্দুল আলী রতনকে ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আসামি এম এ হান্নান তার সহযোগীদের নিয়ে গাঙ্গিনারপাড় মকবুল রেডিও সার্ভিসের সামনে থেকে ধরে তার নতুন বাজারের বাসায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলেন। পরে সন্ধ্যায় তাকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর নিচে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।

আব্দুল আলী রতনের মা ও বোন ফাতেমা জহুরা রতনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করলে আসামি হান্নান তাদেরকে হুমকি প্রদান করে বলেন, ‘তোমার বড় ছেলে আব্দুল গণিকে হত্যার জন্য গুলি লোড করা আছে’। এ কথা বলে তাদেরকে বের করে দেন।

আসামিরা নিজেরা ও তাদের রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
এমএইচপি/ এএসআর

** কিশোরগঞ্জের পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১২ অক্টোবর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।