ঢাকা: বিদেশি নাগরিক হত্যায় আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন আইএস জড়িত থাকার কথা উঠলেও বাংলাদেশে আইএসের মতো কোনো সংগঠন বা তাদের তৎপরতা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বলতে পারি, আমাদের এখানে আইএস বা সে ধরনের কোনো সংগঠন বা তৎপরতা গড়ে উঠতে পারেনি।
রোববার (০৪ অক্টোবর) দুপুরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বিদেশি নাগরিক হত্যায় আইএস জড়িত কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা এটা বলতে পারি না। এখন পর্যন্ত আইএসের জড়িত থাকার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বাংলাভাই এদের সৃষ্টি করা হয়েছিলো। আমরা তো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, গ্রেফতার করেছি। আর আমাদের কিছু কিছু লোক তো অতি উৎসাহী হয়ে ওদিকে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়ে। এটাই সমস্যা।
দুই বিদেশি নাগরিক হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের মদদ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দুই জন বিদেশি নাগরিক মারা গেছেন। সেখানে স্টাইলটা অনেকটা একই রকম। চারটা গুলি করেছে, একটাও মিস হয়নি। তার মানে কি এটা সুপরিকল্পিত। তার আগে বিএনপির এক নেতার কিছু বক্তব্য এবং এ হত্যাকাণ্ডের পর তার প্রতিক্রিয়া সব কিছু একটু মিলিয়ে দেখলে কিন্তু জিনিসটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
সাংবাদদিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই একটি ঘটনায় সব অর্জন ধ্বংস হয়ে গেছে, এই যদি আপনাদের চিন্তা-ভাবনা হয়, তবে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যেই তো সফল হলো। তাদের এ ঘটনাগুলোর পিছনে নিশ্চয়ই মদদ আছে। এবং এটা করাই হচ্ছে যেন আমাদের অর্জনগুলো যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে। নিশ্চয়ই তাদের এর মধ্যে হাত আছে।
তিনি বলেন, তাদের আগাম কথাবার্তা থেকে সূত্র পাওয়া যায়। গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চয়ই এটা দেখবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী যারা তাদের যখন বিচার করছি, তারাই রাজত্ব করেছিলো পঁচাত্তরের পর ২১ বছর। তারাই ক্ষমতায় ছিলো। আজকে তাদের বিচার করছি, তার কিছু প্রতিক্রিয়া তো হবেই।
তবে এদের প্রতিরোধে জনসচেতনতা প্রয়োজন বলে মত দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একটি গ্রুপ তো আছে, যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং সেটা তারা করতে থাকবে। আজকে বাংলাদেশে আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এটাই তো অনেকের পছন্দ না।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে না আসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম আসবে না। বললো যে, এখানে পরিস্থিতি ভালো না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে কি ঘটলো? এ ব্যাপারে আমাদের মিডিয়াগুলো হাইলাইটস করেছে কি-না? অস্ট্রেলিয়ায়ও কিন্তু দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হলো। তার কি জবাব দেবে তারা?
![](files/October2015/October04/pm12_388418685.jpg)
তিনি বলেন, এখানে একটা হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিক্রিয়া দেখালো যে দেশগুলো তারা অস্ট্রেলিয়ার এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কি বলবে? পাশাপাশি আমেরিকায় গুলিতে ১০ জন মারা গেলো তার কি হবে? তারা কি সেখানে ঘোষণা দিয়ে রেড অ্যালার্ট দিয়েছে যে, এখানে কেউ আসবে না।
তিনি বলেন, আমরা সবকিছুতেই একটু বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই। আমাদের ১৬ কোটি মানুষ। একটা ছোট্ট ভূখণ্ড। আমেরিকা একটা বড় দেশ। কতো তাদের জনসংখ্যা? আমাদের দ্বিগুণ তাদের জনসংখ্যা। দেশটা কতো বিশাল। ৫২ স্টেটের একটা স্টেটের সমান হলো বাংলাদেশ। আমাদের এখানে তাদের অর্ধেকের সমান জনসংখ্যা বসবাস করে। এখানে আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে, খাদ্য নিরাপত্তা সব কিছু আমরা করে যাচ্ছি। আমেরিকা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নজমুলকে কিন্তু নিউইর্য়কের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কানেটিকাটে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে। বহু বাঙালি সেখানে কাজ করেন, ট্যাক্সি চালান, প্রতিনিয়ত তারা কিন্তু সেখানে খুন হচ্ছেন। কোনোদিন মিডিয়া সেগুলোকে হাইলাইট করে না। কেন? তারা আমেরিকায় মারা গেছে, সেজন্য?
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে একটা ঘটনা ঘটলে আমরা খুব সেনসেটিভ হয়ে যাই। অর্জনগুলোর ওপর যেন শ্যাডো পড়ে যায়, হারিয়ে যায়, ওই একটা ঘটনায়। আমরা এতো মানসিক দৈন্যতায় কেন ভুগি?
সরকার কোনও ঘটনাকে ছোট করে দেখে না, উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যেকোনও ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই।
বিদেশে বাংলাদেশি নিহত হলে তার খবরকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের বিদেশিদের কাছে এ জিনিসগুলোও তুলে ধরা দরকার যে, আপনার নিজের দেশে বাঙালি মারা যাচ্ছে, তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলে দিচ্ছে। সেই নিউজ আমার দেশে কেন গুরুত্ব পাবে না? বিদেশি নাগরিক মারা গেলে আমরা যতো গুরুত্ব দেই, আমার দেশের মানুষ মারা গেলে আমরা ততো গুরুত্ব দেই না কেন? এটা আমার প্রশ্ন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্কুলের মধ্যে ঢুকে মেরে ফেলা হচ্ছে গুলি করে। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, প্রতিনিয়ত তাকে এ ধরনের ঘটনা, হত্যা দেখতে হচ্ছে। সেখানে কি অবস্থা সেটাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। হিসেব করে দেখুন, সেখানে প্রতি মিনিটে কতোজন খুন হচ্ছে, কত মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে। ওদের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের এই একটি দু’টি ঘটনায় হতাশ হওয়ার তো কিছু নেই। আমরা তো ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা এ ঘটনাগুলো ঘটার সঙ্গে বিচার করছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। সৌদি আরবের খালাফ হত্যার আমরা বিচার করছি। তাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা আর আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা আলাদা। তারা তো পেলেই গলা কেটে দেয়। আমরা সেটা করলে আপনারাই বলবেন মানবাধিকার গেলো। খুনিদের মানবাধিকার নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনো কিছু হলো হাহাকার পড়ে যায়, আমরা তো বসে নেই। আমরা তো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
দেশের মধ্যে কোনো সংকট আছে কি-না? এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের অবস্থান কি? তা জানতে চেয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের মধ্যে প্রশ্ন যদি থাকতো, তাহলে তো তারা আমাদের দাওয়াত দিতো না। তাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রশ্ন থাকলে তো তারা সেটাও করতো না।
প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা ৭০ শতাংশ, সরকারের ৬০ শতাংশ এবং দলের জনপ্রিয়তা ৫০ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার রেটিং যাই হোক, আমার শিকড় হচ্ছে দল। আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করেছে বলেই আমি এতো ওপরে উঠতে পেরেছি। বিশাল একটা সংগঠন। এখানে ছোট-খাটো ঘটনা তো ঘটতেই পারে। তারপরও কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি শিশুর পায়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্যের গুলির ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের উৎপাত আছে। ওখানে সংগঠন টিকিয়ে রাখাই কঠিন। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় সরকার এমপির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে, মামলা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষকদের ৯১ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে। তারা কি এটা কল্পনা করতে পেরেছিলেন? তারা সচিবদের সঙ্গে সুযোগ-সুবিধার কথা তুলনা করেন। সচিবদের চাকরির বয়স ৫৯ বছর আর শিক্ষকদের ৬৫ বছর করেছি। তাহলে কি শিক্ষকদেরও চাকরির বয়সসীমা কমিয়ে দেবো? সচিবরা আর কোনো চাকরি করতে পারেন না। শিক্ষকরা একাধিক চাকরি করেন। কোন শিক্ষক, কতোজন শিক্ষক, কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন, সেটা আমরা জানি।
তিনি বলেন, তারাতো আন্দোলন করছেন, তাহলে একটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যে বেতন বাড়ানো হয়েছে তা নেবেন না। এখানে আমার হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। অর্থমন্ত্রী আছেন শিক্ষামন্ত্রী আছেন বিষয়টি তারা দেখবেন। শুধু একটা কথা বলবো, আন্দোলন করে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার ক্ষতি করবেন না।
নিউইর্য়কে প্রধানমন্ত্রীর হোটেলে সামনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে ড. ইউনূসের উপস্থিত থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যার আপন জায়গা খুঁজে পেয়েছে। জনগণই এর জবাব দেবে। তিনি তো করও দেন না। মামলা করে স্থগিত করে রাখেন, যাতে কর দিতে না হয়।
লন্ডন সফররত খালেদা জিয়ার এক বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি লন্ডনে বসে তো ডিম পাড়ায় ব্যস্ত। আর কি করেন জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
এমইউএম/এসকে/এমএমকে/এএসআর
** জাতিসংঘে বাংলাদেশের অবস্থান কেন্দ্রবিন্দুতে
** বিএনপির বক্তব্য-প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিতপূর্ণ