ঢাকা: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা শিখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেও চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন।
কথাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে এক টানা বলে গেলেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় আরও বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তাও হয়েছে। সড়ক-সেতু মন্ত্রী বলেন, এখন বিজনেস কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে বসে কথা হচ্ছে। তাদের মতামত জানছি। তিনি বলেন, রাস্তা আর ব্রিজের চেয়ে বেশি পকেটের দিকে নজর দিলে কোনো কাজ হবে না। সেজন্য ‘কমিটমেন্টকে’ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
‘আমি কাজ করি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট সবার আগে। আমি সাহস করে সততার সঙ্গে কথা বলি। যার উৎস হলো ওই কমিটমেন্টই’-বলেন মন্ত্রী।
আর এ সবের দীক্ষা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এমন বক্তব্য তুলে ধরে মন্ত্রী আরও বলেন, ভোর বেলা ফোন করে যাকে পাওয়া যায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর কাউকে তেমন একটা নয়। যখন পাই সেটি অনেক কষ্টে। এটি আমার একটা দুঃখ-মত দেন তিনি।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব নানা বিষয়ে কথা বলেন। ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে ডিসিসিআই। সেমিনারের শুরুতে ব্যবসায়ীরা ওবায়দুল কাদেরের বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে মন্ত্রীর দৌড়ঝাঁপে সড়ক ও সেতুতে যে পরিবর্তন ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে তার উদাহরণ বার বার টেনে আনেন।
এ সময় মন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ধরেন এখন একটা রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলো। এটি জেনে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে যখন না পাই তাহলে কেমন হবে? চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে দক্ষ লোক দরকার। এজন্য সাহস লাগে। এই সাহসটা সবার হয় না। দেশ চালাতে খুব পড়াশোনা দরকার নয়। তবে দরকার শক্ত বোধশক্তি। সেটি কতটা শক্ত তা দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। চট করে সমাধান বলে দেন প্রধানমন্ত্রী। যা আমাদের মাথায়ও আসে না।
প্রধানমন্ত্রীর গুণ তুলে ধরে মন্ত্রী এও বলেন, সত্য কথা বলছি। তোষামোদ পছন্দ করি না, যা সত্য তাই বলছি। সি লাভস ইমপসিবল। যা তিনি বাস্তবায়ন করছেন।
এ সময় করতালিতে পুরো সেমিনার হল মুখরিত হয়ে ওঠে।
এর পরপরই সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য উপস্থাপন করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা কী একজন লোকও বিশ্বাস করেছিলেন যখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে। বুঝতে হবে সি ইজ আওয়ার ক্যাপ্টেন।
পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে আলাদা করে এভাবে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী। বলেন, আমাদের অনেক সিনিয়র সহকর্মীরাও এটি বিশ্বাস করেননি প্রথমে। এখন সব সচিবরা পদ্মায় গেছেন; সেখানে পূর্ণ গতিতে কাজ চলছে।
মন্ত্রী জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পদ্মাসেতুর মূল পাইলিংয়েল কাজ শুরু হবে। এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ শুরু হবে। এ জন্য চার দেশের সঙ্গে সংযুক্ত সড়কগুলো চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক হাজার সাতশো বায়ান্ন কিলোমিটার সড়কে দুই লেনের রাস্তার সমীক্ষা কাজ শেষ করেছে। এ সড়কগুলো চার লেনে উন্নীত করা হবে। প্রথমে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল পরে পর্যায়ক্রমে সিলেট ও চট্টগ্রামের সড়ক।
মন্ত্রী এরপর মেট্রোরেলের কথায় আসেন। বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল হবে- এটি কি কেউ ভেবেছিলেন আগে। পদ্মাসেতুর মতো এটিও স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। মন্ত্রী জানান, মেট্রোরেলের ৬টি টেন্ডার হয়ে গেছে। বাকি ২টি হবে ডিসেম্বরে আর ফেব্রুয়ারিতে। এরপর বাস্তবিক পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।
রাজধানীর উত্তরা থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের কাজও শুরু হবে- জানান মন্ত্রী।
সম্প্রতি জাপানের টোকিও সফরে গিয়ে আরও দুটি মেট্রোরেলের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এমআরটি লাইন ৬ হচ্ছে এখন। তারপর হবে ১ এবং ৫। সম্ভাব্যতা যাচাই ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এসটিপি অনুমোদন হওয়ার পর এই কাজটি দৃশ্যমান হবে।
মন্ত্রী জানান, ঢাকা চট্টগ্রাম চারলেনের কাজ ১৪৩ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। বাকিটুকু ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেষ না হলে ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ফের নতুনভাবে কাজ করা হবে।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মনে হয় কাজ যথা সময়ে ঠিকাদাররা শেষ করতে পারবেন। মাঝে মাঝে পাথর সংকট হয়। এটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর (মন্ত্রিত্ব) ঢাকা-জয়দেবপুর ময়মনসিংহ সড়কের কাজ দেখলাম মামলায় বন্ধ হয়ে আছে। তখন ডিপোটিজ ওয়ার্কারদের দিয়ে কাজ শুরু করি। সড়কটির মাত্র ১১ কিলোমিটার বাকি আছে যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
এছাড়া জয়দেবপুর এলেঙ্গা ৭০ কিলোমিটার কাজও শুরু হয়ে গেছে জানান তিনি।
আশুলিয়ার রাস্তা চারলেন না করে আরেকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চারলেনের জন্য জমি দরকার যা সেখানে নেই। ফলে বিদেশি সহায়তায় বিমানবন্দর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত হবে এক্সপ্রেসওয়ে। যার কাজ আগামী বছর (২০১৬) নাগাদ শুরু হয়ে যাবে। এটি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পোশাক শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের ৩০ শতাংশ হবে এলিভেটেড আর ৭০ শতাংশ সড়ক। আর যার মধ্যে অনেকগুলো ব্রিজও আছে, জানান মন্ত্রী।
কাঁচপুর মেঘনা গোমতি নদীতে জাইকার সহায়তায় আগামী মাসে (নভেম্বর) সেতুর কাজ শুরু হবে। এডিবি দেশের এক হাজার সাত শ’ বায়ান্ন কিলোমিটার দুইলেন রাস্তার সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করেছে। যা চারলেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রামে কর্নফুলী নদীতে ট্যানেল নির্মাণের কাজের কথা উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
এসএ/আইএ
** জানুয়ারিতে চার দেশের সড়ক যোগাযোগ শুরু