ঢাকা: রাজধানীবাসীর মানসিক প্রশান্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের জন্য এক সময়ের উল্লেখযোগ্য একটি স্থানের নাম ‘মুক্তাঙ্গন’। রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে ভাটা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থায়ীভাবে সেটি দখল করেছে কার পার্কিং ও রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ীরা।
গত এক দশকে বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে এ ‘মিনি পার্কটি’ দেখে এখন আর চেনার উপায় নেই। গত দুই বছরে এখানে হয়নি কোনো সভা সমাবেশ, নেই কোনো বসার বা হাঁটার ব্যবস্থা।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পল্টনের প্রান্তে পার্কে প্রবেশের মুখেই দোকান বসানো হয়েছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। দখল বজায় রাখতে মাঝামাঝি নির্মাণ করা হয়েছে একটি মসজিদ, মসজিদের আগে একটি টিনের চালের ছাউনিও তৈরি করা হয়েছে। এরপরে আবার চা-বিস্কুটের দোকান।
এগুলো পার করে জিরো পয়েন্টের মোড়ে পৌঁছালেই কনফেকশনারী, পুলিশ বক্স, পুরানো জিনিসপত্রের দোকান। আর পুরো মাঠ জুড়েই রয়েছে সারিবদ্ধ মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ ভাড়ায় চালিত বিভিন্ন ছোট যানবাহন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘ঢাকা মাইক্রোবাস ও কার মালিক সমিতি’র নামে পার্ক দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছে মিহির নামে এক ব্যক্তি। যার নেতৃত্বেই রাস্তার পাশের ফুটপাতের দোকানগুলো গড়ে উঠেছে। এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদাও ওঠায় মিহির। একইসঙ্গে কার পার্কিং সমিতির আওতায় এখানে গাড়ি পার্কিং করতে হলে প্রতিদিন দুই-তিনশ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর নতুন কোনো যানবাহন এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে নিবন্ধন ফি’র নামে নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি রাতে টিনের ছাউনির নিচে বসে জুয়ার আসর। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় এসব ঘটলেও তারা যেন কিছুই দেখছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর মোট আয়তনের ২০ শতাংশ উন্মুক্ত জায়গা থাকা দরকার। কিন্তু ঢাকায় এই পরিমাণ মাত্র ৪ শতাংশ। এরমধ্যে আবার বিভিন্ন পার্ক উদ্যান চলে গিয়েছে দখলবাজদের হাতে। নগরীর প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে দখল হয়ে যাওয়া এসব পার্ক-উদ্যান পুনরুদ্ধার জরুরি।
সভা সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থান দখল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দেশে এখন গণতান্ত্রিক অবস্থা বিরাজ করছে, যে কেউ চাইলেই অনুমতি নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে। তবে বর্তমানে দেশের অবস্থা ভালো হওয়ায় রাজনৈতিক সভা সমাবেশ কমে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে কেউ হয়তো এ জায়গাগুলো ব্যবহার করছে।
পার্ক দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি রাজধানীর প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে জনসম্পৃক্ত আন্দোলন হলে প্রয়োজনে জনগণই তাদের কর্মসূচি পালনের ব্যবস্থা করে নেবে।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবীব বাংলানিউজকে বলেন, পার্কগুলোই নগরবাসীর নির্মল বিনোদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দুঃখের বিষয় কর্তৃপক্ষের অনীহা এবং দখলবাজদের দৌরাত্ম্যে নগরীর বেশ কিছু পার্ক বেদখল হয়ে গিয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা ধরে রাখা কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি, স্থায়ীভাবে এ স্থানগুলো দখলমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এটা সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এইচআর/এসএইচ