ঢাকা, বুধবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

তালিকা নেই বাসে, ভাড়া আদায়ে স্বেচ্ছাচারিতা

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
তালিকা নেই বাসে, ভাড়া আদায়ে স্বেচ্ছাচারিতা ছবি : শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গত ১ অক্টোবর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের বর্ধিত নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকেই সবগুলো বাস-মিনিবাসে বর্ধিত এ নতুন ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা ছিল।

কিন্তু মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ বাসেই এ ধরনের তালিকা চোখে পড়ছে না। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে তালিকা না টাঙানোর অপকৌশলে যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছে পরিবহনগুলো।

একদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, অপকৌশল, অনিয়ম ও প্রতারণার মাধ্যমে নগরীর ৮৭ শতাংশ পরিবহন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। অন্যদিকে বাস মালিক, চালক ও সুপারভাইজারদের দাবি, বর্ধিত ভাড়া নয়, আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে ২-৩ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দাবি, শুরুতে তালিকা না টাঙিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বাসের সংখ্যা বেশি থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়ার পর সেই সংখ্যা কমেছে।

কিন্তু বর্ধিত ভাড়ার নির্দেশনা কার্যকরের অর্ধমাস পর সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহনে চড়ে বাস মালিক, চালক ও সুপারভাইজার এবং বিআরটিএ’র দাবির বিপরীত চিত্র দেখা যায়। যাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী, কোনো কোনো বাসে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর সত্যতাও পাওয়া যায়।

যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অতীতেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাস মালিকেরা এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া করেছেন, এখনও করছেন। তারা এটা ‘নিয়মে’ পরিণত করেছেন।

যাত্রীরা বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস‘র নামে নগরীর বেশ কিছু বাস আগে থেকেই অনেক বেশি ভাড়া আদায় করে আসছে। সেসব বাসে বর্ধিত নতুন ভাড়ার তালিকা টাঙানো হলে তাদের আদায় করা আগের ভাড়ারও কম হয়ে যাবে বলে এ অপকৌশল নেওয়া হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী থেকে আব্দুল্লাহপুরে নিয়মিত যাতায়াত করেন খুচরা ব্যবসায়ী আহাদ আলী। এক্ষেত্রে তিনি যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটের তুরাগ পরিবহনের বাসে চলাচল করেন। সম্প্রতি আহাদ আলীর সঙ্গে তুরাগের বাসেই আলাপ হয়।

আহাদ আলী ‍জানান, বাসটিতে নতুন ভাড়ার তালিকা টাঙানো হয়নি। তার কাছ থেকে এ পথে ৪০ টাকা ভাড়া চেয়েছেন সুপারভাইজার, যা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অন্তত ১০ টাকা বেশি। এ নিয়ে তার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজারের কথা কাটাকাটি, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

তিনি অভিযোগ করেন, আগের দফায় ভাড়া বাড়ানোর পর তুরাগ পরিবহনের  বাসগুলো ‘সিটিং সার্ভিস’র নামে সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় শুরু করে। কিন্তু পরে কৌশলে ‘সিটিং সার্ভিস’কে লোকাল করে একই ভাড়া ‍আদায় করতে থাকে। এবার তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় যুক্ত হয়েছে বর্ধিত নতুন ভাড়া।

কেবল যাত্রাবাড়ী-টঙ্গীই রুটেই নয়, মিরপুর থেকে সদরঘাট, মতিঝিল, কমলাপুর, সায়েদাবাদ; টঙ্গী থেকে আজিমপুর, মিরপুর, গাবতলী; গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী অধিকাংশ বাসেই এমন চিত্র দেখা যায়। সময় নিয়ন্ত্রণ, স্বকল্প পরিবহন, বিহঙ্গ, ইউনাইটেড, তানজিল, বিকল্প, প্রজাপতি, দিশারী, বসুমতিসহ বিভিন্ন পরিবহন ‘সিটিং সার্ভিস’র নামে অপকৌশলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে।

জবরদস্তি করে কেবল ভাড়া আদায়ই নয়, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারদের বাকবিতণ্ডা, এমনকি হাতাহাতি-ধস্তাধস্তির ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে।

এসব বিষয়ে বাংলানিউজ কথা বলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, অতীতেও বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, সেই সময়গুলোতেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এবারও অতীতের ব্যতিক্রম দেখছি না।

মোজাম্মেল হক বলেন, এবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন। এখন তিনি যদি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাহলে এই দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হবেন।

এ বিষয়ে আলাপ করলে বিআরটিএ’র পরিচালক (এনফোর্সম্যান্ট) বিজয় ভূষণ পাল বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার শুরুর দিকে বহু বাসে ভাড়ার তালিকা ছিল না। এ তালিকা না থাকা ও বেশি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট শুরু হওয়ার পর তা অনেক কমেছে।

তিনি বলেন, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। আমি মনে করি, এখন ৭৫ শতাংশ বাস নিয়ম মেনে ভাড়া আদায় করছে এবং ২৫ শতাংশ বাস অমান্য করে যাচ্ছে।

চলতি বছরের ১ আগস্ট গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ায় সরকার। এরপর পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে, গত ১০ সেপ্টেম্বর বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৬০ পয়সা করে সরকার। তবে, সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ৭ টাকা ও মিনিবাসের ভাড়া ৫ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে।

১ অক্টোবর থেকে বর্ধিত এ নতুন ভাড়া কার্যকর হয়। ঢাকা ছাড়াও আশেপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও চট্টগ্রাম নগরীতে এই ভাড়া কার্যকর হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
টিএইচ/পিসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।