ঢাকা, বুধবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘শিশুরা আমার কাছে একেকজন ছোট্ট রাসেল’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
‘শিশুরা আমার কাছে একেকজন ছোট্ট রাসেল’

ঢাকা: ছোট শিশুদের মাঝে নিজের ছোট ভাই শেখ রাসেলের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। তাই প্রত্যেক শিশুর জন্য নিরাপদ দেশ গড়তে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সবাই আমার কাছে একেকজন ছোট্ট রাসেল।

সেই ছোট্ট রাসেল হিসেবে আমি তোমাদের আদর-স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছি। সেইসঙ্গে চাই তোমরা মানুষের মতো মানুষ হও। ’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫২তম জন্মদিন উপলক্ষে রোববার (১৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় রেহাই দেয়নি নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকেও। ঘাতকদের বুলেট কেড়ে নেয় নিষ্পাপ রাসেলের প্রাণও।

ছোট ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছোট্ট রাসেলকে কোলে করে বড় করেছি। আজকে রাসেলের ৫১ বছর বয়স হতো। ’

‘মাঝে মাঝে সেটাই চিন্তা করি, রাসেল কেমন হতো দেখতে। আজকে এখানে ছোট্ট শিশুরা, তোমাদের মাঝে অনেকে সেই রাসেলের বয়সী। তোমাদের মুখের দিকে যখন তাকাই, মনে হয় আমি যেন সেই রাসেলের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। ’

রাসেলের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমাদের ৫ ভাইবোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। রাসেল আমাদের সকলের নয়নের মনি ছিলো। ’

‘রাসেল অকালেই ঝরে গেছে। ফুল ফোটার আগেই ঘাতকের আঘাতে তার জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। তা আর প্রস্ফুটিত হতে পারেনি। ’

বঙ্গবন্ধুকে প্রায়ই কারাগারে থাকতো হতো বিধায় পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত রাসেলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাসেলকে নিয়ে জেলে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলে সে কিছুতেই বাবাকে ছেড়ে আসতে চাইতো না। ’

‘যেদিন আমরা বাবা কাছ থেকে আসতাম সেদিন রাসেল সারারাত কাঁদতো। কখনো কখনো সে চিৎকার করতো। আমাদের সবাইকে ডাকতো । আমরা সবাই তার পাশে বসে থাকতাম। রাসেল বলতে পারতো না- কী তার ব্যথা। এভাবেই রাসেল বড় হয়। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটু বড় হলে সে মনে করলো বাবা ওখানেই থাকবে, ওটাই তার বাড়ি। মাঝে মাঝে জিদ ধরতো বাবাকে জেলখানা থেকে নিয়ে আসবে। ’

‘বাবার জন্য রাসেলের মনটা আকুলি-বিকুলি করতো। তাই সে এক সময় আমার মাকেই আব্বা-আব্বা বলতো। ঐ ছোট্ট মানুষটা বুকে কত ব্যথা নিয়ে ছিলো। ’

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এখনো বুঝে পাই না কী অপরাধ ছিলো তাদের। বঙ্গবন্ধুতো দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন। আজ আমাদের রাষ্ট্র আছে, সম্মান আছে। তিনি যদি সংগ্রাম না করতেন, বছরের পর বছরের জেলে না থাকতেন, আমরা স্বাধীন জাতি পেতাম না। ’

‘আমরা দুই বোন দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলাম। অনেকে হয়তো মনে করেন, আমরা বেঁচে আছি বলেই দেশের জন্য কিছু করতে পারছি। ’

‘কিন্তু আপনজন হারিয়ে বেঁচে থাকাটা, বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে এই বেঁচে থাকাটা যে কতো কষ্টের, সেটা আমি ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারবো না। ’

প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ দেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে। তাদের জীবন সুন্দর হবে এবং এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ’

‘আজকে যারা শিশু, আগামী দিনে বড় হয়ে তারাইতো নেতৃত্ব দেবে। ’

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের কাছ থেকে সবাইকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশের যেন কোনো রকম জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের স্থান না হয়, মাদকাসক্ত হয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন তাদের জীবনটাকে নষ্ট না করে। ’

প্রত্যেক শিশুকে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবা-মা, অভিভাবক, শিশুকে, প্রত্যেককে বলবো প্রতিটি শিশুকে পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। কারণ লেখাপড়া ছাড়া, জ্ঞান অর্জন ছাড়া কখনো নিজেকে গড়ে তোলা যায় না। ’

প্রধানমন্ত্রী শিশুদের খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য চর্চার ওপরও গুরুত্ব দিতে বলেন।

প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি শিশুকে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেজন্য উপযুক্ত পড়াশোনা করতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করছে। ’

বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। পরে তিনি শিশুদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫/আপডেট ১৪৪১ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।