ঢাকা, বুধবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রে ঝুঁকি দেখছে যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশ ভ্রমণে কোনো দেশেরই রেড এলার্ট নেই

রাইসুল ইসলাম, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
বাংলাদেশ ভ্রমণে কোনো দেশেরই রেড এলার্ট নেই

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকাস্থ বেশ ক’টি বিদেশি দূতাবাস বাংলাদেশ সফর নিয়ে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করলেও কোনো দেশেরই পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ক কোনো ঘোষণা দেয়নি। রেড এলার্ট বা সতর্কতা জারি করা দেশগুলোর পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।



খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১৭ অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত বর্তমানে বাংলাদেশ ভ্রমণে বিশ্বের কোন দেশেরই রেড এলার্ট বা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি নেই। রীতি অনুযায়ী, কোনো দেশ তার নাগরিকদের নির্দিষ্ট কোনো দেশে ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করলে পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়। তারপর সংশ্লিষ্ট দেশের কূটনৈতিক মিশন তা প্রচার করে। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশ ক’টি দেশের দূতাবাসই সরাসরি সতর্কতা জারি করে।

উপরন্তু অনেক দেশেই ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কতা জারি থাকলেও বাংলাদেশের ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেখাতে শুরু করে বিভিন্ন মহল। বিষয়টি নানামুখী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

মূলত বিদেশিদের জারি করা সতর্কতা নিয়ে এতো বেশি মাতামাতি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে আগে কখনই দেখা যায়নি। আর বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের ব্যাপারে কতিপয় মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অহেতুক মাতামাতিও কিছুটা রহস্যজনক।

সব কিছু মিলিয়ে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর কোনো মহল বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ইস্যুকে হাতিয়ার করে গোপন কোনো খেলায় মেতে উঠেছে। যার উদ্দেশ্য দেশের স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করা।

এছাড়া হঠাৎ করে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের আসতে না চাওয়ার পেছনে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড জনিত উদ্বেগের যোগসূত্র আছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রচার করা হলেও বিষয়টি যে ক্রিকেট রাজনীতির অংশ তা বুঝতে এখন আর কারও বাকি নেই। কারণ একই ধরনের সতর্কবার্তা ভারতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হলেও সেখানে দল পাঠাতে আপত্তি নেই অস্ট্রেলিয়ার।

বর্তমানে বিশ্বের কোনো দেশেরই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম। আর পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে ধরনের সতর্কর্তা জারি করেছে একই ধরনের সতর্কতা বলবৎ আছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্ষেত্রেও।
 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ভ্রমণ তালিকাতে বাংলাদেশের ব্যাপারে রেড এলার্ট নেই। বরং প্রতিবেশী নেপাল ও মায়ানমার সফরের ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের ভ্রমণ সতর্ক বার্তায় ৬টি দেশ ভ্রমণে সতর্কতা আর ৩২টি দেশ ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই।
 
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বাংলাদেশের বিষয়ে নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্ক থাকতে বলা হলেও নিষেধাজ্ঞা নেই। আর এই সতর্কতা প্রতিবেশী ভারতের জন্যও প্রযোজ্য। শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্যও একই ধরনের পরামর্শ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসের সাধারণ ঝুঁকি রয়েছে। সেখানে বিদেশিদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে হামলা হতে পারে। ’
 
এমনকি অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে তার ক্রিকেট দলের সফর বাতিল করলেও, বিশ্বের যে ১৩টি দেশে নিজেদের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি ওই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। আর দেশটি বাংলাদেশের জন্য যে ধরনের ভ্রমণ সতর্ক বার্তা দিয়েছে, একই ধরনের সতর্ক বার্তা রয়েছে আরও ৫৭টি দেশের ওপর, যে তালিকায় নাম আছে ভারতেরও।
 
পাশাপাশি নিজেদের নাগরিক হত্যার পর প্রথমে সতর্ক বার্তা জারি করলেও একদিনের মধ্যেই তা উঠিয়ে নেয় ইতালি। ২৯শে সেপ্টেম্বর জারি করা লাল বার্তাটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বর্তমানে এ বিষয়ে কোনো বার্তা নেই।
 
কানাডাও বাংলাদেশে তার নাগরিকদের জন্য যে ‘উচ্চমাত্রার সতর্কতা’ অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে, একই সঙ্গে তা বহাল আছে প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমারসহ বিশ্বের প্রায় ৯৩টি দেশ ও অঞ্চল সফরের ক্ষেত্রে।
 
নিজ দেশের নাগরিক হত্যার প্রেক্ষিতে নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে সর্বশেষ গত ৮ই অক্টোবর বার্তা দিয়েছিলো জাপান। কিন্তু সেই জাপানি দূতাবাসই নিজেদের ফেসবুক পেজে আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় তাদের দেশের নাট্যকার ইয়ামামোতো ইজুর '১০০ বস্তা চাল' নাটকের মঞ্চায়নের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সেখানে গিয়ে তা উপভোগ করার অনুরোধ জানায়।
 
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার প্রেক্ষিতে এ ধরনের সতর্ক বার্তা সাধারণ ঘটনা। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের সতর্ক বার্তা জারি করা হয়। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে ভ্রমণ সতর্ক বার্তা জারি করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের প্রতি কোন দেশই তার নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। ভ্রমণ নিয়ে এখন কোন ধরনের রেড এ্যালার্টও নেই।
 
সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে আগের মতোই নিরাপদ বোধ করছেন।
 
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রশ্নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। নিরাপত্তার দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স ও ভারতের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা জরিপকারী প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
 
এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিনিয়তই পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তা বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে থাকে তাদের নাগরিকদের। উদ্দেশ্য, নাগরিকদের আগে থেকেই সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ রাখা। এমনকি পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশও বিভিন্ন সময় নাগরিকদের সুনির্দিষ্ট দেশ সফরের বিষয়ে সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়েছে। যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বর্তমানে বাংলাদেশিদের লিবিয়া যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
 
তথাকথিত ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’র মধ্যেও চলতি মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফর করে চার সদস্যের ব্রিটিশ সংসদীয় প্রতিনিধিদল। ওই দলের নেতা অ্যানি মেইন ০১ অক্টোবর ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঢাকা ও সিলেট সফর করেছি। কিন্তু কোনো ঝুঁকি অনুভব করিনি। ’
 
ভ্রমণ বিষয়ে সতর্কবার্তা জারির পরও পশ্চিমা কূটনীতিকরা ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, সচিবালয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আরব কূটনীতিকদের মতে, বিশ্বের অনেক স্থানের চেয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ। একটি আরব দেশের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। বিভিন্ন দেশে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা মনে করেন, বিশ্বের অনেক স্থানের চেয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ।
 
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রে এ নিকোলায়েভ সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দু ফোঁটা পানি বৃষ্টি বোঝায় না।
 
বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয় মালয়েশিয়াও। মালয়েশীয় হাইকমিশনার নরলিন বিনতি ওথমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে মালয়েশিয়া চিন্তিত নয়, এমনকি আমরা মালয়েশিয়ার নাগরিকদের এদেশে কোনো ভ্রমণ সতর্কতাও ইস্যু করিনি।
 
বিদেশি হত্যার পর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংছিয়াং বলেন, তাঁর দেশ নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্ক করার প্রয়োজন মনে করছে না।
 
দুই বিদেশি হত্যার পর বিদেশিদের নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে মিডিয়ায় মাতামাতি থাকলেও বর্তমানে স্বাভাবিক ছন্দেই দেশে চলাফেরা করছেন বিদেশি নাগরিকরা।
 
সার্বিকভাবে দেশে বিদেশিদের আসা-যাওয়ার হার স্বাভাবিক রয়েছে। অভিবাসন পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ১১ দিনে মোট ১৯ হাজার ৭৯২ জন বিদেশি বাংলাদেশে এসেছে। আগের বছরের ওই সময়ে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ হাজার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
আরআই/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।