ঢাকা সেনানিবাস থেকে: শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্য না করার নির্দেশনা দিয়েছেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার।
রোববার (০৮ নভেম্বর) সকালে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের (ঢাকা সেনানিবাস) এমআই-১৭ হ্যাঙ্গারে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
শিগগিরই জাতিসংঘ মিশনে কঙ্গো যাচ্ছেন বিমান বাহিনীর ৩৫৮ জন সদস্য। বিএএফ কন্টিনজেন্টের এসব সদস্যকেই এ দিকনির্দেশনা দেন আবু এসরার।
মিশনের দায়িত্বে পেশাদারী মনোভাব প্রদর্শনের আহবান জানিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক কিছু লিখতে নিষেধ করে দেন।
আবু এসরার বলেন, ‘ফেসবুকে কেউ কেউ কোন মন্তব্য করেছে আগে। এটি করা যাবে না। কোন নেগেটিভ মন্তব্য করা যাবে না। সমস্যার কথা বলতে হলে প্রথমে কমান্ডারকে বলতে হবে। ’
সদস্যদের প্রতি নিয়মনীতি মেনে দেশের অর্জিত সম্মান অক্ষুন্ন রাখার আহবান জানান তিনি।
নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে হবে না। মনে রাখতে হবে, আমরা সোলজার। সব পরিবেশে চলতে, জানতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘অনেকের মধ্যে আপনাদের বাছাই করা হয়েছে। তাই আপনাদের কাছে প্রত্যাশাও অনেক। সেখানে গিয়ে কোন সাইকোলজিকাল ডিসঅর্ডার যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন, পরিবারকেও সেভাবে প্রস্তুত রাখবেন। সেখানে প্রতিকূল, দুর্গম ও রোগপ্রবণ পরিবেশে কাজ করতে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন। ’
‘মিশনে গিয়ে ওজন বাড়ানো চলবে না’ বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘ওজন বেড়ে গেলে হঠাৎ পরিশ্রমে হার্টের সমস্যা হতে পারে, যা জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে’।
তিনি বলেন, ‘যোগাযোগের বিষয়টি উন্নত করা হয়েছে, যাতে আপনারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। প্রথমদিকে যারা মিশনে যেতেন, তারা এ সুবিধাটি পেতেন না। ’
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৬৩২ জন সদস্য ৯টি দেশে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশিরা অন্যদের থেকে ভিন্ন। কারণ তারা বায়াসড নয়। তারা পুরোমাত্রায় পেশাদার।
‘কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। সদস্যরা দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছেন’- বলেন তিনি।
আবু এসরার বলেন, ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের বর্তমান বিমান বাহিনী পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সংগঠন। দেশের আকাশসীমার অতন্দ্র প্রহরীরা বিশ্বশান্তি রক্ষায়ও রেখে চলেছেন অসামান্য ভূমিকা।
বিমান বাহিনী প্রধান জানান, ১৯৯৩ সালে বসনিয়া হার্জেগোভিনায় প্রথম শান্তিরক্ষী পাঠায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। এরপর থেকে বাহিনীর ৪ হাজার ৭০৯ জন সদস্য কুয়েত, পূর্ব তিমুর, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মালি প্রজাতন্ত্র, চাদ ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সুদান এবং হাইতিসহ বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে ও করছে।
সদস্যদের উদ্দেশ্যে আবু এসরার বলেন, ‘৩৫৮ জন চলে যাবেন, ৩৫৮ জন আসবেন। তার মানে এ মুহূর্তে একটি স্থান শূন্য থাকছে। কিন্তু তাদের দায়িত্বগুলো অন্য সদস্যরা পালন করছেন। তাদেরও কৃতিত্ব রয়েছে, সেটি মনে রাখবেন। ’
তিনি বলেন, ‘আপনারা কেউ আলাদা নন, সবাই একটি দল। নিজেদের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা যেন থাকে। নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ মেনে চলতে হবে। সিনিয়রদের মেনে চলতে হবে। তা নাহলে তাকে মিশন থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। পোশাকের সম্মান রাখবে। এটাই শৃঙ্খলা। সবাই পেশাদার সোলজার। এ মিশন যেন আমাদের ইউনিটকে আরও সম্মান এনে দেয়। ’
আবু এসরার বলেন, ‘আপনারা পরিবার ছেড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনাদের পরিবারকে আমরা দেখবো। আপনারা শুধু আপনাদের কাজে মনোনিবেশ করুন। যোগাযোগের নম্বরগুলো নিয়ে যাবেন, দিয়ে যাবেন। আপনাদের মা-বাবা, শিশু ও সব স্বজনের সুরক্ষা দেবে বাহিনী। ’
সবশেষে তিনি সবাইকে আশির্বাদ দেন, ‘সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, বাংলাদেশের ইমেজ অনেক উঁচুতে নিয়ে যান। বাংলাদেশ যেন ক্রমশ অনেক উচ্চতায় পৌঁছে যায়। ’
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে মিশনের সাফল্য কামনায় মোনাজাতে অংশ নেন সবাই।
মিশনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৩টি কন্টিনজেন্টের (ইউটিলিটি এভিয়েশন ইউনিট, এয়ারফিল্ড সার্ভিসেস ইউনিট ও এয়ার ট্রান্সপোর্ট ইউনিট) মোট ৩৫৮ জন বিমান বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এছাড়া একটি সি-১৩০ পরিবহন প্লেন, ৬টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইক্যুইপমেন্ট রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, এয়ার অফিসার (ঢাকা) এবং বিমান সদর ও ঘাঁটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
এসকেএস/জেডএম
** শান্তি মিশনে কঙ্গো যাচ্ছেন বিমান বাহিনীর ৩৫৮ সদস্য