ঢাকা: রাজধানীতে গণ-পরিবহনে ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য যেন থামছেই না। লোকাল বাস সার্ভিসগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও কম স্টপেজ ও সিটিং সার্ভিসের নামে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছেই।
চেকারকে বকশিস দেওয়ার মাধ্যমে সিটিং বাসগুলোতে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া এবং যাত্রীদের টিকিট না দিয়েই বাস শ্রমিকরা ভাড়া নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার এসব পরিবহনের অধিকাংশতেই হাফ পাশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।
শনিবার ও রোববার (০৭ ও ০৮ নভেম্বর) আজিমপুর, ফার্মগেট, মিরপুর, মহাখালী, নতুন বাজার এলাকা ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
মিরপুর থেকে গুলিস্তান ও আজিমপুরগামী বিকল্প, শিখর, বিহঙ্গ, সেফটি, মিরপুর লিংকসহ বেশ কয়েকটি বাস সিটিং সার্ভিস বলা হলেও এসব বাসে দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হচ্ছে সিটিং সার্ভিসের।
এছাড়া সায়দাবাদ থেকে গাজীপুরগামী তুরাগ পরিবহনের গায়ে সিটিং সার্ভিস লেখা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আবার এসব বাসের অধিকাংশতেই নেই বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট। মানা হচ্ছে না সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া হাফ ভাড়ার নির্দেশনা।
মিরপুর থেকে গুলশান পর্যন্ত চলাচলকারী জাবালে নূর, আকিক, জাবালে তুর পরিবহনগুলোতেও দেখা গেছে ভাড়া নৈরাজ্যের দৃশ্য। সিটিং সার্ভিস, কাউন্টার সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় দীর্ঘদিনের রীতিতে পরিণত হয়েছে আর এবার এর সাথে যোগ দিয়েছে ‘কম স্টপেজ সার্ভিস’। বাসের গায়ে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘হাফ পাশ নাই’। এসব বাস সার্ভিসে উঠলেই গুণতে হয় শুরুর স্টপিজ থেকে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া।
শ্যাওড়াপাড়া থেকে আজিমপুরগামী একটি বাসে উঠে দেখা যায়, যাত্রীরা বাসের মধ্যে রড ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু এসব বাসে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এরমধ্যে বাসটি আগারগাঁও পৌঁছালে চেকার উঠে এবং বাসের যাত্রী বইয়ে আসনের (আসন ৩৬) চেয়ে কম ২৪ যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখ করে বাস শ্রমিকের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে নেমে যায়।
বাসটি কলেজ গেট পার হওয়ার পর এক যাত্রীর কাছে ভাড়া চাইতে গেলে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। নিজামুল ইসলাম নামে ওই যাত্রী ক্ষেপে গিয়ে বাস শ্রমিককে গালিগালাজ করেন। ক্ষুব্ধ ওই যাত্রী বলেন, ‘গায়ে লিখে রাখছে কম স্টপেজ কিন্তু সারা রাস্তায়ই যাত্রী তুলছে। সারা পথ দাঁড় করিয়ে এনে ভাড়া চায় সিটিংয়ের, কোন দুঃখে ওকে সিটিংয়ের ভাড়া দেব। কেউ কিছু না বলতে বলতে ওরা যা খুশি তাই শুরু করেছে। ’
বিজয় স্মরণী মোড়ে গুলিস্তানগামী অন্য একটি বাসের যাত্রী অ্যাডভোকেট শওকত হায়াত ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘শ্যাওড়া পাড়া থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে ২৫ টাকা। সবাইকে যদি এভাবে অর্ধেক পথ গিয়ে পুরো ভাড়া দিতে হয় সেটা তো যাত্রীদের প্রতি জুলুম, প্রশাসনও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ’
এ সময় পাশ থেকে অন্য এক যাত্রী বলে ওঠেন, ‘বিআরটিএ কী বলবে তারা তো আগে থেকেই খেয়ে বসে আছে। ’
এদিকে, সেতুমন্ত্রী গত উনিশ ও একুশ অক্টোবর বাস মালিক ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাসগুলোকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ দিলেও এসব পরিবহনে তা তো মানা হচ্ছেই না বরং মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে বাসের গায়ে লিখে দেয়া হয়েছে ‘হাফ পাশ নাই’। আর এ নিয়ে বাস শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা মাঝেমধ্যেই হাতাহাতির ঘটনাতেও গড়াচ্ছে।
ঢাকা স্কুল অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট এর শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বাশার অভিযোগ করে বলেন, ‘মন্ত্রী যেটা বলেছেন তার উল্টোটা হচ্ছে। তার নির্দেশের কোনো তোয়াক্কাই করছে না বাসগুলো। আজিমপুর থেকে মিরপুরগামী সব বাসের গায়েই লেখা হাফ পাশ নেই, আমরা শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এত ভাড়া কিভাবে দেব- বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের ভাড়ার তালিকার মধ্যে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা মালিক শ্রমিকদের সৃষ্টি। বিভিন্ন পরিবহনের মালিকরা বিআরটিএতে এসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে গেছেন কিন্তু তারা এটা মানছেন না। বিআরটিএ চেয়ারম্যান দেশে ফিরলেই মালিকদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো লিখিত আদেশ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া না নিলেও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এইচআর/এমজেড