ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভিক্ষা নয়, এমপিও দিন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
‘ভিক্ষা নয়, এমপিও দিন’ ছবি: রাজিব/বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘খেয়ে না খেয়ে ১৬ দিন রাস্তার পাশে অবস্থান করছি। মানুষ গড়ার কারিগর যদি রাস্তায় থাকে মানুষ গড়বে কে? প্রধানমন্ত্রী, আমরা ভিক্ষা চাই না, এমপিও দিন’।


 
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কথাগুলো বলছে যশোরের আলতাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল আজিজ।
 
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর দাবিতে শিক্ষকরা গত ১৬ দিন লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
 
দেশের ৬৪ জেলা থেকে আসা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রায় সাত হাজার প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ শিক্ষক এতে অংশ নিয়েছেন।
 
শিক্ষক আজিজ বলেন, ২৬ অক্টোবর ঢাকায় এসেছি। সেদিন থেকে রাস্তার ধারে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। শিক্ষকদের কেউ খবরও নিচ্ছে না।

হতাশা সুরে তিনি বলেন,‘দিনে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেই। পরিবার চালাতে রাতে লেবারের কাজ করি। আর কত নিচে নামলে রাষ্ট্র, সরকার আমাদের দেখবে।
 
পলাশ কুমার মিত্র নামের একজন সহকারী শিক্ষকের বর্ণনা দিয়ে আজিজ বলেন, ১৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করে। সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস নেয়। বাকি দিন স্কুল থেকে ছুটি দিয়ে ক্ষেত খামারে কাজ করে পরিবার চালায়। এমপিওভুক্তির আশায় এখনো বসে আছে।
 
আজিজ বলেন, প্রায় সাড়ে ৩শ’ ছাত্রছাত্রী, ৯ জন শিক্ষক নিয়ে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকৃতি পায়। প্রতিবছর কাগজপত্র নিলেও এমপিও দেয়া হয় না।
 
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এ সব শিক্ষক ভিক্ষা করলে রাষ্ট্রের বদনাম হবে। আমরা আপনার কাছে (প্রধানমন্ত্রী) ভিক্ষা নয়, এমপিও চাই।
 
খুলনা থেকে আসা বারআডিয়া শহীদ স্মরণী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক এসএম ফিরোজ। শিক্ষকতা করলেও স্ত্রী, এক ছেলের সংসার চালায় ভ্যানচালক বাবা নুরুল হক।
 
ফিরোজ বলেন,‘টিউশনি করে পকেট খরচও হয় না। বাবার ঘাড়ে খাচ্ছি। ২৬ অক্টোবর আন্দোলনে চলে এসেছি। বাসায় বলেছি, এমপিও না হলে ফিরব না। ’

কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সাত হাজার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ১৫-২০ বছর এমপিও পাচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করে আসছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার আলো পৌঁছে দিলেও ন্যায্য অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। শিক্ষকদের বেশিরভাগই সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানএমপিও না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। অর্থবরাদ্দ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সরকার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুন্ডু বলেন, গত প্রায় ৫ বছর ধরে এমপিওর দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। সরকার কিছুই বলছে না। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এমপিওর ঘোষণা ছাড়া কোন শিক্ষক ঘরে ফিরবে না।
 
তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিন প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। অন্যের দেওয়া কম্বল দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে তারা রাত্রিযাপন করছেন।
 
গত ১৬ দিনেও প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর ঘুম না ভাঙ্গায় হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, কত টাকাই তো রাষ্ট্রের অপচয় হয়। এমপিও দিতে কত টাকা লাগবে? বঞ্চিত শিক্ষকদের প্রতি সদয় হতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।
 
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত, যোগদানের তারিখ থেকে বয়স গণনা ও নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধের দাবিতে গত ২৬-২৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান পালন করে শিক্ষকরা। ২৮-২৯ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে ৩০ অক্টোবর  থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত আমরণ অনশন পালন করেন তারা। পরে লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ শিক্ষকদের অনশন ভাঙ্গান।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
আরইউ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।