ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মাজারে সিজদার বিরোধী ছিলেন খিজির খান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
মাজারে সিজদার বিরোধী ছিলেন খিজির খান খিজির খান

ঢাকা: মাজার জিয়ারতের নামে সিজদাহ করা, ফুল দেওয়া, মানতসহ শরীয়ত বিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিলেন খিজির খান। তিনি শরীয়ত সম্মতভাবে কবর জিয়ারতের পদ্ধতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতেন বলেও দাবি করেছেন তার অনুসারীরা।



এছাড়া নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও খিজির খানের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার চলছে বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা।

গত ৫ অক্টোবর বিদ্যুৎ উন্নয়নের বোর্ডের সাবেক এই চেয়ারম্যানকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় নিজ বাসায় ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করে। ওই ঘটনায় জড়িত পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরাও তার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন খিজির খানের ছেলে মতিউল ইসলাম।

মতিউল ইসলাম দাবি করেন, কিছু কিছু মিডিয়া তার বাবা সম্পর্কে ঢালাওভাবে লিখছে। যার বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা(এসআই) আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তারেকুল ইসলাম মিঠুন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে খিজির খান হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। ধর্মীয় মতাদর্শগত কারণেই তারা খিজির খানকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে সে।

তবে গ্রেফতারকৃতের এই বক্তব্য মেনে নিতে পারছে না তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। তারা দাবি করেছেন, খুনি হয় মিথ্যা বলেছে, নয়তো তাদের কোন গডফাদারের পরামর্শে কাজটি করেছে। সে নিজে কিছুই জানে না।

নিহতের ছেলে মতিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বাবা মাজার জিয়ারতের নামে সিজদাহ করার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি কাউকে খানকায় আসতে দাওয়াত করতেন না। তাকে জানাশোনার পরে কারো ভালো লাগলে সে রহমতীয়া খানকা শরীফে আসতেন।

প্রচার করা হচ্ছে রহমতীয়া খানকা শরীফে পুরুষ ও মহিলা এক সঙ্গে জিকির আজকার করতো। কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে পুরুষ ও মহিলারা পৃথক স্থানে নামাজ আদায় ও জিকির আজকার করতেন। খানকা শরীফের দ্বিতীয় তলায় ছিলো পুরুষদের নামাজের স্থান। আর তিন তলায় নামাজ আদায় করতেন মহিলারা।

তিনি বলেন, ‘আমার মৃত বাবার সম্পর্কে মিথ্যা কিছু না লেখার জন্য মিডিয়ার কাছে আবেদন রাখছি। প্রয়োজন হলে সরেজমিন এসে দেখে সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ করছি।

তিনি বলেন,‘খিজির খান ছিলেন নকশেবান্দিয়া-মুজাদ্দেদীয়া তরিকার ইমাম (প্রধান)। যাকে ‘নূরী কওম’  বলা হয়। আর ‘নূরী কওমে’ পীর মুরিদ বলে কিছু নেই এবং হাতে হাত দিয়ে বায়াত নেয়ারও কোন প্রচলন নেই। নূরী কওমে সদস্যদের থেকে কোন হাদিয়া গ্রহণ করা হয় না-সদস্য হওয়ার জন্য কোন প্রকার হাদিয়া দেওয়ার রেওয়াজ নেই।

খিজির খান সম্পর্কে তার সাবেক সহকর্মী ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুল হক বলেন, যারা খিজির খানকে হত্যা করেছে তারা পথভ্রষ্ট। রহমতীয়া খানকা শরীফ শরীয়তের নিয়ম মেনেই পরিচালিত হতো। হালাল হারামের ব্যাপারেও অত্যন্ত কঠোর ছিলেন খিজির খান। রুজি-রোজগার এবং খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হালাল –হারাম মেনে চলতেন। কর্মজীবনেও অসম্ভব সফল ছিলেন খিজির খান।

আবদুল গনি নামের এক শিক্ষক বাংলানউজকে বলেন, খিজির খান পীর ছিলেন না। তিনি ছিলেন আমাদের ঈমাম।

তিনি বলেন, অন্য পীরের দরবারে গেলে টাকা দিতে হয়। এখানে কোন অনুসারীকে টাকা দিতে হত না। তিনি  কোথাও মাহফিল (ধর্মীয় আলোচনা) করলেও বিনিয়ম কিছু নেওয়া পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন আমাদের গ্রামের (ফিলিপনগর) সবচেয়ে বড় ঈদের জামায়াতের ঈমাম। নামাজ পড়ানোর বিনিময়ে কোনদিন টাকা গ্রহণ করেন নি।

যারা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তারা কোন ইসলাম পালন করে প্রশ্ন করেন এই শিক্ষক।

খিজির খান ১৯৬৫ সালে ফিলিপনগর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কায়েদ-ই-আযম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। অধ্যয়ন শেষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চাকরিতে যোগদান করেন। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পদ চেয়ারম্যান হিসেবে অবসরে যান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির খান একাধারে ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সভাপতি, মহানগর মহাবিদ্যালয়-বাড্ডার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও আইইবি’র প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এনএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।