রাজশাহী: চৌবাচ্চা ভর্তি স্বচ্ছ পানি। চারিদিকে সবুজ গাছপালার সমারোহ।
এসবই ছিল এক সময় রাজশাহীর লালন শাহ পার্কের আকর্ষণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর অবহেলা আর অযত্নে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই জৌলুস হারিয়েছে পদ্মাপাড়ে চিত্ত বিনোদনের এই পার্কটি।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সরেজমিন নগরের পাঠানপাড়ায় পদ্মানদীর কূল ঘেঁষে নির্মিত লালন শাহ পার্কে গিয়ে চোখে পড়ে এই বেহাল চিত্র।
স্থানীয়রা বলছেন, পার্কটিকে ঘিরে বিনোদন ছাড়াও নদীতীরের নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়ানের যে নিরন্তর চেষ্টা ছিল তা যেন আজ ম্লান হতে বসেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
পার্কের প্রবেশ মুখ দিয়ে ভেতরে গিয়েই দেখা গেল সিঁড়ির ওপর সটান করে থরে থরে বসানো সিমেন্টের স্লাবগুলোর প্রায় অর্ধেকই কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে।
খুলে নিয়ে গেছে বসার জন্য তৈরি করা বেঞ্চের টাইলসও। ভেঙে ফেলা হয়েছে স্থাপনার বিভিন্ন অংশ।
মুক্ত মঞ্চে টাইলসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নকশাগুলোও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলা হয়েছে। দিনের পর দিন ধরে চলছে এই কাণ্ড, যেন দেখার কেউ নেই।
চৌবাচ্চার স্বচ্ছ পানিতে শেওলার মোটা পরত পড়েছে। তার মধ্যে পড়ে আছে চিপসের প্যাকেট, পানির খালি বোতলসহ নানান আবর্জনা।
সীমানা তৈরির এঙ্গেলে শুকোতে দেওয়া আছে আশপাশের বাড়ির কাপড়। কতটা অবহেলায় পড়ে আছে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার এ নয়নাভিরাম পার্কটি তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা দায়।
সম্প্রতি পার্কটি লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় টনক নড়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক)। তাই এখন তড়িঘড়ি করে বেষ্টনি তৈরির কাজ শুরু করেছে রাসিক। ।
পার্ক নিয়ে কথা হয় সেখানে ঘুরতে আসা কয়েকজন তরুণ-তরণীর সঙ্গে। এরমধ্যে নগরের শিরোইল এলাকার তাহমিদা রহমান বন্যা ও রিফাত রায়হান জানালেন, তারা প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসেন। কিন্তু নানান কারণে দিন দিন পার্কটি তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে।
‘এরপরও পদ্মানদীর টানে প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে মুক্ত হাওয়া খেতে সব বয়সের মানুষই ছুঁটে আসেন এখানে। তাই পার্কটিতে কেবল সবুজ বেষ্টনি দেওয়াই নয় এর সংস্কারও প্রয়োজন,’ বলেন এই দুই তরুণ।
এদিকে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা জানায়, ২০১৩ সালে পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন ও বিনোদনের জন্য লালন শাহ পার্কটি নির্মাণ করা হয়।
রাসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এই নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক পার্কটির উদ্বোধন করেন।
পার্কে এক সঙ্গে প্রায় ৫-৭ হাজার মানুষ অবস্থান করতে পারবে। পার্কের ভিতরে গ্রিন জোন, ল্যান্ডস্কেপ এবং পর্যটন ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইটেমে পরিপূর্ণ করা হয়।
তৈরি করা হয় একটি মুক্তমঞ্চ। যেখানে মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুবিধা রয়েছে। পদ্মানদীর আবহে ৭৫০ জন বিনোদনপ্রেমী মানুষ এই থিয়েটারে অনায়াসে এক সঙ্গে বসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন।
সার্বিক বিষয়ে রাসিক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি পার্কের বেহাল অবস্থার কথা জেনেছি। কিন্তু উন্মুক্ত অবস্থায় পার্কটির সৌন্দর্য বহাল বা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই প্রথমে বেষ্টনি দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে।
তিনি জানান, পার্কের সবুজ বেষ্টনি নির্মাণ কাজ শেষ হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে লালন শাহ পার্কের যথাযথ সংস্কার করা হবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে রাসিক-এর এই কর্মকর্তা জানান, পার্কে একটি দ্বিতল রেস্তোরাঁ থাকবে। যার নিচতলায় ফার্স্টফুড এবং উপরে থাকবে বসার শেড।
এছাড়া আরও ৩টি বড় এবং কয়েকটি ছোট বসার শেড নির্মাণ করা হবে। থাকবে কফি হাউসের ব্যবস্থাও। শিশুদের জন্য দোলনা, স্লিপার ও ঘুর্ণির ব্যবস্থাও করা হবে।
তবে এ জন্য অর্থ বরাদ্দ ও সময় প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি লালন শাহ পার্ক বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাসিক। বিভিন্ন মহল থেকে এর প্রতিবাদ ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজশাহীবাসী। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে রাসিক।
সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেষ্টনি দেওয়া হলেও ভেতরে প্রবেশে কোনো টিকিট লাগবে না বলে জানিয়েছেন রাসিক জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী আমিরুল করিম।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এসএস/এমএ