ঢাকা: সরকারি-বেসরকারি যে কোনো সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার (এনআইডি) এখন প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ কাজ হরহামেশায় চলছে। বিভিন্ন কম্পিউটার কম্পোজ বা সাইবার ক্যাফে বা অনলাইনে সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেই হচ্ছে এ অবৈধ কার্যক্রম।
২০১৪ সালে পুলিশ প্রশাসন ৫৩ হাজার ১০০ জাল জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করে। ওই বছর ১৮ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণ চন্দ্র মিত্রের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাজধানী ও তার আশেপাশে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ভুয়া এনআইডিসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনা তখন গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্বের সঙ্গে খবরে উঠে আসে।
তবে ওই ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনের বিশেষ উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। অপরাধীরাও থেমে থাকেনি। এখনো সারাদেশেই সেসব চক্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর এমন এক চক্রের খোঁজ মিলেছে বরিশালে। সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে আদালতের সামনে বিক্রি হচ্ছে নাগরিক তথ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল জাতীয় পরিচয়পত্র। আর ৫০ টাকা মূল্যে সহজেই নাগরিকরা সংগ্রহ করছেন এসব জাল এনআইডি।
সম্প্রতি বিষয়টি বরিশাল জেলা প্রশাসকের নজরে আনা হলে তিনি নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে একটি চিঠি দিয়েছেন। যার কপি বাংলানিউজের হাতেও এসেছে।
জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ‘Barisal-Problem and Prospect’ শীর্ষক এক ফেসবুক গ্রুপ পেইজের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে-মাত্র ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নৈতিকতা!!! পাওয়া যাচ্ছে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র। বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মুখেই থাকা ‘মুলাদী কম্পিউটার’এ মাত্র ৫০ টাকায় পাওয়া যায় নকল জাতীয় পরিচয়পত্র।
চিঠিতে ‘মুলাদী কম্পিউটার’ এর একটি ফটোও প্রিন্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে গোল চিহ্ন দিয়ে জাল এনআইডি প্রস্তুতকারককে নির্দেশ করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ওই ফেসবুক গ্রুপের পেইজে ঢুকে দেখা গেল, সেখানে অনেকেই বরিশালের জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠিটি দিয়েছেন। ৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি মঙ্গলবার ইসিতে পৌঁছেছে।
দেশে ভোটার রয়েছে ৯ কোটি ৬২ লাখ। এদের মধ্যে সবমিলিয়ে প্রায় ১ কোট নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি। বর্তমানে ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সেবা নিতে, এমনকি বাড়ি ভাড়া নিতে গেলেও বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। যদিও নির্বাচন কমিশন দেশের সব নাগরিকের এনআইডি সরবরাহ না করা পর্যন্ত এর ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু সে নির্দেশনা মানছে না কোনো পক্ষই। আর এ কারণেই জাল এনআইডির চাহিদা রয়েছে মনে করেন ইসি কর্মকর্তারা।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ এর ১৮ (১) ও (২) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা জ্ঞাতসারে তা বহন করলে বা কোনো ব্যক্তি
জাল করতে সহায়তা দিলে বা উক্ত পরিচয়পত্র বহনে প্ররোচনা দিলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এজন্য অপরাধীকে সাত বছরের জেল এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
ইইউডি/আরআই