ঢাকা: রাজধানীর মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের কিশোর কর্মচারী রিয়াদকে (১৬) গুলি করে হত্যা ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও অভিযুক্ত প্রধান আসামি আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও।
মামলার বাদীর অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছে করেই তাকে গ্রেফতার করছে না। এদিকে আসামি পক্ষ থেকে বিষয়টি আপোষের চেষ্টাও চলছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার পরিদর্শক আলিম হোসেন জানিয়েছেন, তারা প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছেন। তবে ঘটনার পরপরই তিনি সপরিবারে পলাতক রয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, মেসবাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিকে শনাক্ত করা হয়। এ সময় তার কাছে একটি পিস্তলও ছিল।
আরিফুল পালিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে আরিফুল পালিয়ে যেতে না পারে।
তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই আরিফুল সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে প্রধান আসামি আরিফুলের বড় ভাই রাসেল মামলার বাদী নিহত রিয়াদের বড় ভাই রিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকায় আসতে বলেছেন। মামলা আপোষ করারও চেষ্টা করছেন তিনি, এমন অভিযোগ রিপনের।
বাংলানিউজকে রিপন বলেন, দু’দিন আগে মালিকের ভাই রাসেল আমাকে ফোন করে ঢাকায় আসতে বলেন। কিন্তু আমি যাইনি। রিয়াদের মতো তাকেও হত্যা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আসামিদের সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে রিপন বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা আমার ভাইকে এভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার চাই।
২৮ অক্টোবর মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর কর্মচারী রিয়াদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক আরিফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে রিয়াদের বড় ভাই রিপন ওয়ারী থানায় মামলা দায়ের করেন।
এর আগে রিয়াদের গুলিবিদ্ধ হওয়াকে ছিনতাইয়ের ঘটনা হিসেবে সাজিয়ে ২৮ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে তাকে নেওয়া হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ এ ঘটনায় ঘরোয়া হোটেলের জসিম নামে এক কর্মচারীকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এছাড়া ঘটনার পরপরই ঘরোয়া হোটেলের ম্যানেজার শফিকসহ অন্তত ২৪ জন কর্মচারীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদের মধ্যে অনেকেই সাক্ষী হিসেবে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বাদী রিপন জানান, ঘটনার দিন রিয়াদের খোঁজে তিনি ওই হোটেলে গিয়ে দোতলার একপ্রান্তে রিয়াদকে হাত বাঁধা অবস্থায় দেখেন। মালিক আরিফ ও অন্য কর্মচারীদের কাছ থেকে মোবাইল চুরির কথা শোনেন তিনি। তিনি মোবাইলের দাম ১৫০০ টাকা পরিশোধ করতে চাইলে তাকে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
রিপন বলেন, রাত ১২টার দিকে রিয়াদকে মালিক আরিফুলের পাজেরো গাড়িতে তুলে মতিঝিল থেকে ৭৩ নম্বর স্বামীবাগে কর্মচারী মেসে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ির পিছু পিছু তিনিও স্বামীবাগে যান। তবে মেসের সামনে হোটেলের কর্মচারী জসিম তাকে বের করে দিলে বাসায় চলে যান।
রিপন আরো জানান, হোটেলের আরেক কর্মচারী মাইনুদ্দীন রাত একটার দিকে তাকে ফোন করে রিয়াদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানান। এরপর ২৯ অক্টোবর সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে তিনি ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
এদিকে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে তারা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছেন যে, আরিফই রিয়াদকে গুলি করে হত্যা করেছে। তারা আরিফকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমানে মতিঝিলের ঘরোয়ার হোটেলটি বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
জেডএফ/আরএ