ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সরকারের অনুমতি নেই

রেল-পিডব্লিউডি’র জায়গা দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড!

আবু খালিদ ও হাসিবুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
রেল-পিডব্লিউডি’র জায়গা দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড! ছবি: জি এম মুজিবুর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সরকারের অনুমতি ও নিবন্ধন ছাড়াই রেলওয়ে ও পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টসের (পিডব্লিউডি) জায়গা দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে রাজধানীর শিল্পাঞ্চল তেজগাঁওয়ে ।

ওই ট্রাকস্ট্যান্ডটির বাইরেও ওই এলাকার প্রধান সড়ক ও এর আশপাশের সড়কগুলো দখল করে রাখা হয়েছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ।



এতে একদিকে যেমন রেলওয়ে ও পিডব্লিউডি হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসহনীয় যানজট। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্বয়ং মেয়র নিজে উদ্যোগ নিয়ে সড়ক থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড সরানোর আল্টিমেটাম দিলেও সেখান থেকে ট্রাক সরাচ্ছেন না মালিকপক্ষ। নানা অজুহাত দেখিয়ে সময় বাড়িয়ে নিচ্ছেন তারা।

এ পরিস্থিতিতে এখান থেকে ট্রাকস্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেন এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

নিবন্ধন ছাড়া যুগের পর যুগ ধরে তেজগাঁওয়ের এই ট্রাকস্ট্যান্ডটি চলছে বলে স্বীকার করলেন বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান।

সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এই স্ট্যান্ডে রাখা হয়। স্ট্যান্ডের জায়গা অপ্রতুল হওয়ায় মূল সড়কের ওপর ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাখা হয়। জায়গার ভাড়া হিসেবে কোনো কিছু দিতে হয় না। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই এই ট্রাকস্ট্যান্ডটি এভাবে চলছে বলে জানান তিনি।

ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের দাবি, এভাবে ট্রাকস্ট্যান্ডটি গড়ে ওঠায় ওই এলাকায় চলাফেরা ও ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অনেকেই জানালেন, ধীরে ধীরে রেল ও পিডব্লিউডি’র জায়গা ট্রাকস্ট্যান্ডের দখলে চলে যাচ্ছে। এছাড়া এই স্ট্যান্ডের আশেপাশেও অনেকেই রেলের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ট্রাকস্ট্যান্ডটি থাকায় বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণও করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া এত এলোমেলো ও বিচ্ছিন্নভাবে ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় ট্রাক-মালিক ও শ্রমিকেরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নিয়ে আরও সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলার দাবি জানান।

ট্রাক মালিক হারুনুর রশিদ বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে তো ট্রাকস্ট্যান্ডে চলাফেরা করা অনেক কঠিন হয়ে পরে। হাঁটু পর্যন্ত পানিও জমে যায়। অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতার অন্যতম উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ট্রাকস্ট্যান্ডটি।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে ও পিডব্লিউডি’র যোগসাজসে এভাবে এত জায়গা দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড করা হয়েছে। অথচ জায়গাটি ব্যবহার করে সরকার অনেক বেশি আয় করতে পারে।

রেলওয়ের জায়গা দখলের বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ভূমি/সংযুক্তি) শাহ মো. ইমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধভাবে জায়গা দখলের বিষয়টি রেলের বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক অফিস দেখে। মন্ত্রণালয় মূলত নীতি নির্ধারণীর কাজ করে থাকে। তবে তেজগাঁওয়ের বিষয়টি আমাদেরও জানা আছে।

তিনি জানান, মেট্রোরেলের কাজের সময়ে এগুলো সব ভেঙ্গে দেয়া হবে। হয়তো বা এ কারণেই অঞ্চলভিত্তিক অফিসের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে না।

নিবন্ধন ছাড়া অবৈধভাবে রেলওয়ে ও পিডব্লিউডি’র জায়গা দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তোলার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী বলেন, সরকারি অনুমতি একেবারেই যে নেই তা কিন্তু নয়।

২০০১ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ট্রাকস্ট্যান্ডটির স্বীকৃতি দেন। তিনি ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে এখানে বহুতল ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তোলার ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়েও অনেকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু জায়গাটি রেলওয়ের হওয়ায় তারা কোনোভাবেই অনুমতি দেয়নি।
তিনি নগরীর মধ্যে ছোট আকারে ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তোলার পক্ষেও মত দেন। তবে এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
একে/এইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।