ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অনুপ চেটিয়াকে ভারতে হস্তান্তর, সঙ্গী দুই সহযোগী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
অনুপ চেটিয়াকে ভারতে হস্তান্তর, সঙ্গী দুই সহযোগী অনুপ চেটিয়া

ঢাকা: বাংলাদেশের কারাগারে থাকা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অনুপ চেটিয়ার পাশাপাশি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয় তার দুই সহযোগী বাবুল শর্মা ও শক্তি প্রসাদকেও।

বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সাজার দেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাকে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

অনুপ চেটিয়ার ইচ্ছাতেই তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, অনুপ চেটিয়ার দীর্ঘদিন কারাগারে আটক ছিলেন। তার আটকাদেশ শেষ হয়েছে।   আটকাদেশ শেষ হওয়ার পর তিনি ভারতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং ভারতে চলে গেছেন। আজ সকালে তিনি ভারতের সীমানা পার হয়েছেন বলে আমি জানি।
 
কার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিয়ম রয়েছে যখন কোনো বিদেশি আমাদের কারাগারে থাকেন, তখন সেই দেশের অ্যাম্বাসিকে (দূতাবাস) আমরা জানিয়ে দেই। তারাই যোগাযোগ রাখেন। আমরা তাকে ছেড়ে দিয়েছি সে কিভাবে গিয়েছে বাকিটুকু সে জানে।

দূতাবাসের মাধ্যমে অনুপ চেটিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা জেলখানা থেকে ছেড়ে দিয়েছি বাকিটুকু তারা জানেন।

সাংবাদিকরা এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ‘পিটিআই বলেছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ’ এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘সকালে বর্ডার পার হয়েছে আমরা জানি। বর্ডারে বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফ’র কাছে গেছে। এটা যদি হস্তান্তর বলেন, তাহলে হস্তান্তর হয়েছে। আমাদের বিজিবি আর ওদের বিএসএফ’র মাধ্যমেই তো গিয়েছে।  

অনুপ চেটিয়া তার নিরাপত্তার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট করেছিল, এ অবস্থায় তাকে কীভাবে হস্তান্তর করা হলো জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আটক থাকার সময়ই রিটটি প্রত্যাহার করেছেন অনুপ চেটিয়া। যাওয়ার সময় তিনি বলেছেন আমি সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিস্কে আমার নিজের ইচ্ছাতেই যাচ্ছি।

মন্ত্রী বলেন, অনুপ চেটিয়া যখন আটক হন তখন বাবুল শর্মা এবং শক্তি প্রসাদও আটক হয়েছিলেন। তাদেরও আটকাদেশে শেষ হয়েছে। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তারাও (অনুপ চেটিয়াসহ) চলে গেছেন।   

সকালে কখন গেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি সময় নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না, সকালে তারা বর্ডার পার হয়ে গেছেন।

অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরে গোপনীয়তা ছিল কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, এ ব্যাপারে কোনো গোপনীয়তা নেই। তবে কোন সীমান্ত দিয়ে অনুপ চেটিয়া ভারতে গেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী তা বলতে চাননি।

অনুপ চেটিয়া ফেরত গেলো, এবার নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কাউকে দেওয়া আর কাউকে নেয়া, এ ধরনের সম্পর্ক আমাদের ভারতের সঙ্গে নেই। এ প্রশ্নটিই আসে না। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমাদের যখন সমস্যা হয় তখন আমরা তাদের সহযোগিতা করি। আবার তাদের যখন সমস্যা হয় তখন তাদের সহযোগিতা করি। কোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমরা অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগীকে ছেড়ে দিয়েছি।

নূর হোসেনকে আনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের সরকার যেদিন আমাদের বলবে, সে (নূর হোসেন) মুক্ত হয়েছে, সেদিন আমরা তাকে বর্ডারে এভাবেই রিসিভ করবো যেভাবে তারা (অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগী) গেল।
 
এর আগে সকালে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার খবর প্রকাশ হয়। এ ব্যাপারে প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না।

মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ রকম কোনো খবর তার কাছে নেই। ’ পরে বেলা পৌনে একটার দিকে খবরে সত্যতা নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিফিং করবেন।

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপ চেটিয়া এবং তার দুই সহযোগীকে ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি পরিষ্কার করেন।

উল্লেখ্য, বুধবার সকালে ভারতের প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) জানায়, অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের খবরেও একই কথা জানানো হয়।

প্রায় ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী ছিলেন উলফার এই শীর্ষ নেতা। ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান এবং অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা ও একটি স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। পরে তিনটি মামলায় তাঁকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বাংলাদেশের আদালত। ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন তিনি।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামকে ভারতীয় অধীনতা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় উলফা। এরপর দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা/আপডেট ১৪২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
এসএমএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।