রাঙামাটি: মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল এক নম্বর সেক্টরের অধীনে। পাহাড়ি পথ দিয়েই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দেমাগ্রি এলাকায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ মাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।
এর আগে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সেই সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিক সেই স্মৃতি ধরে রাখতে পার্বত্য জেলার রাঙামাটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
রাঙামাটি শহরের উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিলি এন্টারপ্রাইজ। এর পশ্চিমে সেনাবাহিনীর পরিচ্ছন্ন মাঠ, পূর্বে উপজেলা পরিষদের নয়নাভিরাম ফোয়ারা। দক্ষিণে ও উত্তরে চলাচলের রাস্তা রয়েছে। মাঝখানে বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বি ভাস্কর্যটি দেখে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যায়।
লিলি এটারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী শাহ আনোয়ার মিন্টু জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের আদ্যপান্ত। জানালেন, আরো কি কি কাজ করলে এর নান্দনিকতা আরো বিকশিত হবে। ভাস্কয্য একদিকে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্যও এটি আকর্ষণীয় স্পট।
তিনি জানান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ও এর আশেপাশে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩১ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ১২ ফুট প্রস্থের ভাস্কর্যটি নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের (বর্তমান নাম-চারুকলা অনুষদ) শিক্ষক সবুজ এ ভাস্কর্যটির ডিজাইন করেন। ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ দিবসের তারিখ উল্লেখ রয়েছে ভাস্কর্যের নিচের অংশে। এছাড়া ভাস্কর্যের পাদদেশে দর্শনার্থীরা যাতে ঘুরে ফিরে দেখতে পারেন সেজন্যই যথেষ্ট জায়গাও রাখা হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে ২০১৩ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন।
ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ঘঁষামাজা, ফিনিশিং, রেলিং, টাইলস, প্রতিবন্ধক দেওয়ালসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ আরো দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে এ পর্যন্ত ভাস্কর্যটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এখনো বাকি রয়েছে ভাস্কর্যের পাদদেশে টাইলস, পাশে লাইব্রেরিসহ বেশ কিছু কাজ।
এখানে অবশিষ্ট জায়গায় শিশু-কিশোরদের জন্য বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি, সীমানা রেলিং, ড্রেসিং রুম ও ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো। ভাস্কর্যের পাদদেশে নৌকার ছবি দেওয়া রয়েছে। সেখানে টাইলস বসানো হবে। এতে পানি দিলে মনে হবে যেনো পানিতে নৌকা ভাসছে। সব কাজ শেষ হলে পুরো স্থানটি হয়ে উঠবে আরো দৃষ্টিনন্দন।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. মুছা মাতব্বর জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য এ ভাস্কর্যটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর অবদান আগামী প্রজন্মকে জানাতেই এই উদ্যোগ। এটি একদিকে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার নিদর্শন, পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালনের উপলক্ষও বটে। এখানে জাতীয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিও যথাযথ মর্যাদায় পালন করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
এসআই