ঢাকা: পতাকার গাঢ় লাল রঙ নেই মেয়েটির কাছে। নেই সবুজ ফুটিয়ে তোলার তুলিও।
পতাকা আঁকার এই মেয়েটি স্বপ্ন দেখে। তবে বড় হয়ে কি হবে, তার উত্তর তার জানা নেই। শুধু জেনেছে বাংলাদেশকে।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে প্রেসক্লাব চত্ত্বরে মেয়েটিকে দেখা গেল বাংলাদেশের পতাকা আঁকতে। ক্লাব চত্ত্বরের বাগানের ঝুরঝুরে মাটিই যেন তার রঙ। আর ছোট্ট হাত দু’টো তুলি।
মেয়েটির নাম মুন্নি আক্তার। সেগুনবাগিচা বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। ক্লাস রোল সাত। জন্মের পর বাবাকে দেখা হয়নি। মা আর নানীর কাছেই বেড়ে ওঠা। মা প্রেসক্লাবে মালীর কাজ করেন। আর নানী বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করেন। হাইকোর্টের সামনের একটি কলোনিতে তাদের বাস।
কখনো কখনো নানীর সঙ্গে মুন্নিও বোতল কুড়ায়। আবার মায়ের সঙ্গে প্রেসক্লাব অঙ্গনেও তার পা পড়ে মাঝে মধ্যে। তবে বোতল কুড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই মুন্নির সাফ জবাব, আমি বোতল কুড়াই না। স্কুলে পড়ি।
ছবি আঁকার প্রতি খুব ঝোঁক মুন্নির। কিন্তু স্কুলে ছবি আঁকার কোনো ক্লাস হয় না। অঙ্কনের সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ মানে তার পরিবারের জন্য চরম বিলাসিতা। তারপরও ছবি আঁকার চেষ্টা করে যায় সে। এই চেষ্টার কারণেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ছবি আঁকার এক প্রতিযোগিতায় প্রথমও হয়েছিল।
আপন মনে ছবি আঁকতে থাকা মেয়েটিকে বড় হয়ে কি হতে চায় জানতে চাইলে কোনো জবাব আসে না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, না কি পাইলট- এসব বলতেই তার জবাব, পাইলট হতে চাই।
উত্তর দিয়েই আকাশে দিকে তাকিয়ে থাকে সে। হয়তো মনের আকাশে তখন কোনো হাওয়াই জাহাজে ভাসতে শুরু করেছে। যে দেশের পতাকা পতপত করে উড়তে দেখতে পছন্দ করে, সে তো আকাশে উড়তে চাইবেই।
বিকশিত হোক শিশুটির স্বপ্ন। আরও বেশি পতাকা আঁকুক মেয়েটি। বিজয়ের দিনে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর হাতে শোভা পাক লাল সবুজের পতাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এসএ/আএইচ