ঢাকা: এবার বের হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ডিজিটাল ব্রেইল বই। এর মাধ্যমে কম্পিউটার অথবা মোবাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করে টেক্সট ফাইলকে দ্রুত ব্রেইল পদ্ধতিতে কনভার্ট করে একটা যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের হাতে অনুভূতির সৃষ্টি করে।
ডিভাইসটি ব্যবহার করলে পড়াশোনার জন্য আর নতুন করে ব্রেইল শিখতে হবে না। ব্রেইল প্রিন্ট করাও লাগে না।
ডিভাইসটি যেহেতু মোবাইল ফোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সেহেতু দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুলে এটি সহজেই ব্যবহার করা যাবে। তাতে প্রিন্ট না করেই বই পড়তে পারবেন প্রতিবন্ধীরা।
এটি তৈরি করেছেন সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যাণ্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের (ইইই) ইনোভেশন ল্যাবের একদল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী।
‘লো কস্ট ওয়্যারল্যাস ইলেকট্রনিক ব্রেইল রিডার’ নামের এ ডিভাইসটিও খুবই সহজলভ্য। এটি বানাতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার টাকা। এ প্রজেক্টের প্রধান সুপারভাইজার সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল এ ভার্সিটির ইইই বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর। কো-সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন একই বিভাগের লেকচারার রবি কর্মকার। সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী আখলাকউজ্জামান আশিক এবং প্রণব কর্মকারও ছিলেন এ প্রজেক্টে।
ডিভাইসটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দিয়ে কয়েক দফা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তারা এটি ব্যবহার করে পড়তে সক্ষম হয়েছেন।
প্রজেক্টে যুক্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে জানান, ডিভাইসটির সফলতার পর এখন তারা এটিকে পেনড্রাইভ এবং মেমোরি কার্ড থেকে সরাসরি বই পড়ার ব্যবস্থায় নিয়ে আসছেন, যা কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। তখন মোবাইল অ্যাপস বা কম্পিউটার ছাড়াও কাজ করতে পারবে।
তাছাড়া ডিভাইসটির মাধ্যমে ব্রেইল পড়ার পাশাপাশি লেখাও যাবে। আরও কিছু ফিচার এর সঙ্গে যুক্ত হবে, যা কৌশলগত কারণে এখনই বলা যাচ্ছে না বলেও জানান প্রজেক্ট টিম।
বাংলানিউজকে তারা জানান, ব্রেইল প্রিন্টার দিয়ে বিশেষ ধরনের বই ছাপিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে, যা ব্যয়বহুল এবং প্রিন্ট না করে পড়া যায় না। পরবর্তীতে রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিভাইস বিভিন্নভাবে তৈরি হয়েছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং আমাদের দেশে পাওয়া যায় না।
এসব বিষয় বিবেচনা করে অত্যন্ত কম খরচে এবং সহজলভ্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ‘লো কস্ট ওয়্যারলেস ইলেকট্রনিক ব্রেইল রিডার’ যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যে ব্রেইল বই পড়ে অভ্যস্ত, তারই ডিজিটাল রূপ।
উদ্ভাবক দলটি আরও জানান, ডিভাইসটির দু’টি অংশ রয়েছে। সেগুলো হল হাডওয়্যার এবং একটি মোবাইল অ্যাপস।
তারা জানান, ডিভাইসটি কম্পিউটার অথবা মোবাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করে টেক্সট ফাইলকে ব্রেইল পদ্ধতিতে কনভার্ট করে একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে হুবুহু ট্র্যাডিশনাল ব্রেইল সিকোয়েন্সের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের হাতে অনুভূতির সৃষ্টি করে। যার ফলে ডিভাইসটি ব্যবহার করে পড়াশোনার জন্য নতুন করে ব্রেইল শিখতে হবে না।
ডিভাইসটি যেহেতু মোবাইল ফোনের যোগাযোগ করতে পারে সেহেতু দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুলে এটি সহজেই ব্যবহার করা যাবে। তাতে করে প্রিন্ট না করেই তারা বই পড়তে পারবেন।
‘লো কস্ট ওয়্যারলেস ইলেকট্রনিক ব্রেইল রিডার’ প্রজেক্টের সুপারভাইজার সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল জানান, ‘ডিভাইসের আইডিয়া এবং দিক-নির্দেশনা দেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পরবর্তীতে আমি এবং আমার ছাত্ররা কাজ শুরু করি’।
নাবিল বলেন, ‘শুরুতে ডিভাইসের হাডওয়্যার অংশটা বানানো খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, আমরা প্রতিটি ডটের দূরত্ব অরিজিনাল ব্রেইল সিকোয়েন্সে রাখতে চেয়েছিলাম। অনেক উপায়ে চেষ্টা করার পর এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দিয়ে পরীক্ষা করার পর আমরা সফলতা পাই। এখন আমরা ডিভাইসটিকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করছি’।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল একটি জার্নালে ডিভাইসটি নিয়ে একটি সায়েন্টিফিক পেপারও প্রকাশিত হয়েছে। কেউ চাইলে গবেষক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেটি পাওয়া যাবে(www.fb.com/Nabilphysics)।
গবেষক দলটি জানান, শিগগিরই ডিভাইসের ডিজাইন ওপেন সোর্স করে দেওয়া হবে। যার ফলে সবাই এটির উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন।
ব্রেইল হচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার জন্য ডটভিত্তিক পদ্ধতি। চোখে দেখতে না পারার কারণে প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া করাটা বেশ কষ্টসাধ্য। বিশ্বে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া করার একটি ভালো মাধ্যম হচ্ছে ব্রেইল পদ্ধতি। আমাদের দেশেও বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করে আসছেন অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু ব্রেইলের উপকরণ অনেক ব্যয়বহুল ও সহজলভ্য না হওয়ার ফলে অনেকের ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারেন না।
বাংলাদেশে ব্রেইলের মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। বাংলা ব্রেইল প্রিন্টিংয়ের জন্য দরকার বিশেষ ধরনের প্রিন্টার। সেটি হলো ইনডেক্স প্রিন্টার, যার দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। এছাড়া ব্রেইলের বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কম হওয়ায় সমস্যায় পড়েন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এসএ/এএসআর