ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত পলাতক রাজাকার কমান্ডার গাজী মো. আব্দুল মান্নানের নির্দেশ পেয়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার আতকাপাড়া গ্রামের সাহেদ ফকির, আবু আনিছ ফকির, ও আলী আকবর মাস্টারের বাড়িসহ ২০-২৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় রাজাকাররা।
স্থানীয় ওইসব রাজাকারদের মধ্যে আটককৃত আসামি শামসুদ্দীন আহমেদ ছাড়াও পলাতক আসামি এটিএম নাসির, মো. হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলামসহ ১০/১৫ জন রাজাকার ছিলেন।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) আটক কিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিনসহ একই মামলার পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দানকালে এ ঘটনার বর্ণনা করেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মো. মুসলিম এবং মো. সুরুজ আলী।
সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তারা এ সাক্ষ্য দেন। মো. মুসলিম এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের একুশতম এবং মো. সুরুজ আলী বাইশতম সাক্ষী।
একই মামলার ওই পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ। পলাতক চারজন হচ্ছেন শামসুদ্দিনের সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।
আসামি শামসুদ্দিন আহমেদ ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষ্যগ্রহণে ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে সাক্ষীদের জেরা করেন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান এবং আটক শামসুদ্দিনের আইনজীবী মাসুদ রানা।
রাষ্ট্রপক্ষের দুই সাক্ষীই তাদের দেখা একই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাক্ষ্যে বলেন, ১৯৭১ সালে ভাদ্র মাসের শেষের দিকে কোনো একদিন সকাল দশটার দিকে এ মামলার আসামি রাজাকার কমান্ডার গাজী মো. আব্দুল মান্নান, এটিএম নাসির, শামসুদ্দীন আহমেদ, মো. হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলামসহ ১০/১৫ জন রাজাকার আতকাপাড়া গ্রামে আসেন।
ওই গ্রামের ভেতর দিয়ে যে রাস্তাটি পার্শ্ববর্তী থানা তাড়াইলের দিকে গেছে সেখানে তারা অবস্থান নেন। এ সময় রাজাকার কমান্ডার আসামি গাজী মো. আব্দুল মান্নান অন্যান্য রাজাকারদের বলেন, ‘এই গ্রামটি মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানা, এটি পুড়িয়ে দাও’।
নির্দেশ পাওয়ার পরই রাজাকাররা আতকাপাড়া গ্রামে অগ্নিসংযোগ শুরু করেন।
সাক্ষী দু’জনের মধ্যে একুশতম সাক্ষী মো. মুসলিম এ সময় ওই রাস্তার পাশে তার ফুফুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। তাছাড়া সাক্ষী দু’জনই সাক্ষ্যে বলেছেন যে, আসামিদের তারা আগে থেকেই চিনতেন।
আতকাপাড়া গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ছাড়াও সাক্ষী মো. মুসলিম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দেন সাক্ষ্যে। সেখানে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে কোনো একদিন দুপুর ১২টার দিকে তিনি করিমগঞ্জ বাজারে যান।
বাজারের ফজলুর রহমান মাস্টারের দোকান থেকে জামা কিনে বাড়ি ফেরার পথে করিমগঞ্জ গোদারাঘাটে (খেয়াঘাট) এসে দেখেন ওই ফজলুর রহমান মাস্টারকেই আটক করে আসামি মো. আজহারুল ইসলাম, এটিএম নাসির, শামসুদ্দীন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন রাজাকার করিমগঞ্জ ডাকবাংলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
পরবর্তীতে ফজলুর রহমান মাস্টারের ভাই বজলুর রহমানের কাছে তিনি শুনেছেন, টাকার বিনিময়ে ফজলুর রহমান মাস্টারকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আগামী ১০ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১২ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৩ মে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনসহ সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মামলায় ৪০ জনকে সাক্ষী করেছেন প্রসিকিউশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমএইচপি/এএসআর