ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কঠোরতায় ৭ মাসে সাগরে ভাসেনি কোনো বাংলাদেশি

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
কঠোরতায় ৭ মাসে সাগরে ভাসেনি কোনো বাংলাদেশি (ফাইল ফটো)

ঢাকা: গত বছরের শুরুতে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের ফলে তা এখন আর নেই। সরকারের কড়া অবস্থানের কারণে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডের উদ্দেশে সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো বিপজ্জনক ঘটনা।

এর প্রমাণ, গত মে মাসের পর থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ড উপকূলে আর কোনো বাংলাদেশিকে পাওয়া যায়নি।

অভিবাসন সমস্যা নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের এই কঠোর অবস্থান বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বছরের শুরুতে মায়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে হাজারো অভিবাসী পাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে সাগরপথে থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। এদের মধ্যে অনেকে অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের সন্দেহভাজন এলাকাগুলোয় অভিযান চালায়। উভয় দেশ তাদের জঙ্গলে অভিবাসীদের গণকবরের খোঁজ পায়। এরপর দু’দেশই তাদের উপকূল-সীমান্ত অভিবাসীদের জন্য বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বঙ্গোপসাগরে দেখা দেয় চরম মানবিক সংকট। পরে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সমন্বয়ে সংকটের সমাধান হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বহু লোককে গ্রেপ্তার করে থাই কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তারা রয়েছেন।

ব্যাংককে আঞ্চলিক সম্মেলনটিতে জানানো হয়, ওই বিপজ্জনক অভিজ্ঞতার পর অবৈধ অভিবাসন বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালিয়ে যায়। যার প্রেক্ষিতে নৌকায় করে সাগর পাড়ি দেওয়ার সংখ্যা এখন প্রায় ‘শূন্যের কোঠায়’ নেমে এসেছে। এর প্রমাণ, মে মাসের পর থেকে থাই উপকূলে আর কোনো বাংলাদেশি উদ্ধার হয়নি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ অভিবাসন বন্ধে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাংককে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অংশগ্রহণে সম্মেলন হয়। সেখানে সাগর পথে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সকলকে অবহিত করা হয়। সেখানে বলা হয়, জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিয়েছে।   এ কারণে এখন পর্যন্ত আর কোনো বাংলাদেশি সাগরে ভ‍াসেনি।

ওই সম্মেলনে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে বাংলাদেশের কঠোর অবস্থান প্রশংসা পায় বলেও জানান সাইদা মুনা তাসনিম। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো ‍অভিযোগ তোলা হয়নি।

অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রা করা মানুষদের বিরাট অংশ মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক। তারা পালিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে বরাবরের মতই রোহিঙ্গাদের দায় নিতে নারাজ মায়ানমার সরকার। এমনকি আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরতও নিতে রাজি নয় তারা। এবারের ব্যাংকক সম্মেলনেও এ দায় এড়িয়ে গেছে মায়ানমার।   ফলে বড় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলনটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৬
জেপি/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।