ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চটে বসেই ওরা দেখছে আগামীর স্বপ্ন!

বেলাল হোসেন ও রফিকুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
চটে বসেই ওরা দেখছে আগামীর স্বপ্ন! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: বাড়ির আঙিনায় পাটের তৈরি চট বিছানো। দু’পাশের টিনের কয়েকটি ঘর।

পাশে কিছু পাটখড়ির স্তুপও দেখা যায়। বাড়ির চারপাশে বিস্তীর্ণ আবাদি জমি। মাথার ওপর খোলা আকাশ। যেখানে চলে রোদ-বৃষ্টির খেলা। খোলামেলা এমন পরিবেশে সেই চটে বসে পড়েছে অসংখ্য শিশু-কিশোর। সঙ্গে রয়েছে বই-ব্যাগ ও পড়াশোনার সামগ্রী।
 
সামনে দাঁড়িয়ে এসব শিশু-কিশোরদের পাঠদান করছেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাদের পেছনে কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার। আর চটের একপাশে পেছনে রয়েছে একটি ব্লাকবোর্ড। অবশ্য সেটি পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করা হয় না। বোর্ডের ওপরের অংশে রং দিয়ে লেখা ‘মনিটরিং বোর্ড’।
 
প্রায় চার বছর ধরে এভাবেই চলছে একটি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুলটিতে লেখাপড়া করছে দেড় শতাধিক ক্ষুদে শিক্ষার্থী। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও এ স্কুলের দূরাবস্থার চিত্র সংশ্লিষ্টদের চোখে ধরা পড়েনি।

তাই চটে বসেই ওরা দেখছে আগামীর স্বপ্ন !
 
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের কাশিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়।
 
শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, প্রায় চার বছর আগে হিংস্র যমুনা স্কুল ভবনটি গিলে খায়। সেই থেকে বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর আশ্রয়স্থল হয় সভাপতির বসতবাড়ির আঙিনা। খোলা আকাশের নিচে পাটের চটে বসে চলছে তাদের লেখাপড়া। আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাঠদানের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। তাদের বসার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই।
 
ফলে কখনও সবাইকে রোদে পুড়তে হচ্ছে। আবার কখনওবা তাদের বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে। এভাবে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে চলছে চটের এই পাঠশালা। কিন্তু এতোদিনেও বিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।     
 
কনা, আসাদুল, রোকসানাসহ একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সভাপতির বসতবাড়ির খোলা আঙিনায় তাদের ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে করে রোদের সময় রোদে পুড়তে হয়। বৃষ্টির সময় পানিতে ভিজতে হয়। এখানে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। ফলে তারা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না।
 
কাশিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি চালুয়াবাড়ী ইউপি সদস্য সায়ের উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, স্থায়ী ভবন না থাকায় বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও এ সমস্যার সমাধান করতে পারছি না।
 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য বহুবার শিক্ষা কার্যালয়ে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো ফল পাইনি। অদূর ভবিষ্যতে ফল পাবো কি-না সেটাও জানি না।
 
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে কয়েক দফা চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো বরাদ্দ মেলেনি। তবে সাময়িক কাজের জন্য দ্রুতই ৩ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
 
উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মোঃ শহিদুল হক বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয়ে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে এখনও বরাদ্দ মেলেনি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে স্কুল ভবন নির্মাণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।