ঢাকা: রাজধানীতে গাড়ি চুরির ঘটনা নতুন কিছু নয়। এ চক্রগুলোর কার্যক্রম রোধে বহুদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সর্বশেষ ১৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও খাগড়াছড়ি জেলায় গোয়েন্দা পুলিশ একাধিক অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মোট ১৩টি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেট কারসহ ছিনতাইকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য (পশ্চিম) বিভাগ।
অপর দিকে চলতি মাসের ০৪ ফেব্রুয়ারি’তে রাজধানীর মুগদা থানার মধুবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ কে এম সাইফুল কবির সাইফ ওরফে শশীক নামে এক গাড়ি চুরি চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, এই চক্রের সদস্যরা তিন ধাপে মোটর সাইকেল ছিনতাই করতো। চক্রের সদস্য জামাল, মো. আকবর আলী, কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল ও আনিসুর রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় প্রাইভেট কার দিয়ে বেরিকেড সৃষ্টি করে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোটর সাইকেল ছিনতাই করে থাকে।
ছিনতাইকৃত মোটর সাইকেলগুলো চক্রের অপর সদস্য মো. এমদাদের কাছে হস্তান্তর করতো। আর এমদাদ এসব মোটর সাইকেল খাগড়াছড়ি জেলায় পুর্নমনি নামে এক চাকমার কাছে বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দিতো।
পুর্নমনি এই মোটর সাইকেলগুলোর ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর পরিবর্তন করে নকল কাগজ ও ব্লু-বুক তৈরি করে তা বিক্রি করতো বলেও গোয়েন্দা সূত্র জানায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (পশ্চিম) উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এই চক্রের সদস্যরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মোটর সাইকেল চুরি ও ছিনতাই করতো।
তবে এই চক্রের সদস্যরা এর আগে কোনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হয়নি। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য গোযেন্দা পুলিশের একাধিক অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি চুরির চক্র সক্রিয় রয়েছে। এরা গাড়ি চুরির পর তা সিলেট খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাঠিয়ে দেয়। একটি চক্রের সঙ্গে অপর চক্রের আন্তঃযোগাযোগ রয়েছে।
এই চক্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি চক্র আছে যারা গাড়ি চুরির পর ওই মালিকের ফোন নম্বরে সংগ্রহ করে এবং গাড়ি ফেরত দেওয়ার নামে চাঁদা দাবি করে। এ সময় চাঁদার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর কথা বলে তারা।
গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর মাজার রোড, পল্লবী ও উত্তরাসহ বিভিন্ন বড় বড় শপিং মল থেকে গাড়ি ও মোটর সাইকেল বেশি চুরি হয়। রাতের বেলায় ধানমন্ডি, উত্তরা, ও মিরপুর এলাকায় প্রাইভেট কার যোগে মোটর সাইকেল ছিনতাই করে চক্রের সদস্যরা।
রাজধানী থেকে গাড়ি (প্রাইভেটকার) চুরি করে তা রিকন্ডিশন করে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে ঢাকার বাইরে বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেয় তারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) নিশাদ রহমান মিথুন বাংলানিউজকে বলেন, গাড়ি চুরি চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পন্থায় মোটর সাইকেল ও গাড়ি ছিনতাই করে। তবে তারা যাত্রী বেশে বেশি থাকে। চোর চক্রের সদস্যদের দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এরা চোর।
এসব চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলেও তারা জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ করে থাকে। অনেকেই নতুন দল গঠন করে গাড়ি ছিনতাইয়ের কাজ করে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর গাড়ি চুরি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে কাজ করছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বেশ ইতোমধ্যেই কয়েকটি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
এসজেএ/আরএইচএস