বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি থেকে ফিরে (হবিগঞ্জ): হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিছুদিন আগেও সকাল থেকেই বিদ্যালয়টির সামনে থেকে ভেসে আসতো ছাত্র ছাত্রীদের পড়ার আওয়াজ।
কিন্তু একটি ঘটনাই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে তাদের মধ্যে। কারণ বাহুবলে অপহরণের পর হত্যা হওয়া চার শিশুর তিনজনই এই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ফলে এ ঘটনার পর থেকেই ভয়ে স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে বিদ্যালয়ের কোমলমতী শিশুরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আঙ্গিনায় প্রবেশ করে ৫ থেকে ৭ জন শিশুকে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে।
শ্রেণী কক্ষগুলোর প্রায় বেঞ্চই ফাঁকা পাওয়া যায়। তৃতীয় শ্রেণীতে ৭ জন শিক্ষার্থীর দেখা মিললেও পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর দেখা পাওয়া যায়নি। চতুর্থ শ্রেণীর
৪৮ জনের মধ্যে মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো।
কথা হয়, ওই শ্রেণীর ছাত্র নিহত তাজেলের সহপাঠী বশিরা ও লুবনার সঙ্গে।
তারা বাংলানিউজকে জানায়, তাজেলসহ চার শিশু হত্যার শিকার হওয়ায় ভয়ে অন্য শিশুরা বিদ্যালয়ে আসে না।
এ ব্যাপারে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষক নুরে জান্নাত জানান, শিশু তাজেলসহ অন্য তিন শিশু খুবই ভদ্র ছিল। তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতো। তাদের হত্যার বিষয়টি অন্য শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক শাহজাহান তালুকদার জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের তিন শিশু ও স্থানীয় মাদ্রাসার এক শিশু নিখোঁজের পর বিদ্যালয়ে
শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমে আসে। ১৭ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ শিশুদের মরদেহ পাওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
তিনি আরও জানান, ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। যারা আসে, তাদেরও লেখাপড়ায় তেমন মন বসছে না।
এ সময় তিনি ও বিদ্যালয়টির সকল শিক্ষকরা ৪ শিশু হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
নিহত শিশুরা হলো- বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র জাকারিয়া শুভ (৮), আবদাল মিয়ার ছেলে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র মনির মিয়া (৭), আব্দুল আজিজের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও সুন্দ্রাটিকি আনওয়ারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার নুরাণী প্রথম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল মিয়া (১০)। তাদের মধ্যে শুভ, মনির ও তাজেল একে অপরের চাচাতো ভাই।
১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তাদের অপহরণ করা হয়। পাঁচদিন পর বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের ইছারবিল খালের পাশে বালুমিশ্রিত মাটিচাপা অবস্থায় ওই চার শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শিশু মনির, শুভ ও তাজেলের বাবার সঙ্গে একটি বড়ই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের জের ধরে ওই শিশুদের অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
আরএইচএস