ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সচিবের বাসায় বৃদ্ধা গৃহকর্মীকে তালাবদ্ধ রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
সচিবের বাসায় বৃদ্ধা গৃহকর্মীকে তালাবদ্ধ রেখে  নির্যাতনের অভিযোগ ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: রাজধানীর রমনার বেইলি স্কয়ার সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের একটি ফ্লাটে এক বৃদ্ধা গৃহকর্মীকে দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গৃহকর্মীর নাম জাহানারা বেগম (৬০)।

তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।

এ বিষয়ে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর রমনা থানায় ওই গৃহকর্মীর ছেলে বাচ্চু একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বাচ্চু অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় একটি নাম্বার থেকে আমার মা ফোন করে। মা কান্নার স্বরে বলতে থাকেন, “বাবা আমারে নিয়া যা, আমি কাজ করতে পারি না, শরীর কাঁপে, এই বাসায় মালিক মারধর করে। মালিকের বউ বেশি মারে। ‘

তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞাসা করি যে, এই নাম্বার কার?’ তখন মা বলে মালিকের ড্রাইভারের। পরে ওই ড্রাইভারের কাছে জানতে পারি আমার মাকে কিভাবে নির্যাতন করে বাসার মালিক।

ঘটনা শুনে ঢাকায় এসে ওই গাড়ি চালকের সঙ্গে দেখা করলে সে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যায়। দেখা করতে চাইলে বাসার মালিক আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। দেখা করতে গেছি এই কারণে আমাকে ও ওই মালিকের ড্রাইভারকে উল্টো বেইলি স্কয়ার সোসাইটির দুইজন দারোয়ান অনেক মারধর করে।

এরপরে আমি রমনা থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করি। আমার মাকে নির্যাতনের বিচার চাই-বলেন বাচ্চু।

বাচ্চু আরও বলেন, গত তিন বছরের মাযের সঙ্গে মাত্র তিনবার দেখা করতে পেরেছি। কিন্তু মা যেখানে কাজ করে সেখানে কোনো দিন দেখা করতে দেয়নি।

তার বেতনের টাকা ওই বাসার মালিকের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে  আসতো বলেও জানান তিনি।  

গৃহকর্মীর ছেলে বাচ্চু কিশোরগঞ্জের পাসতা গ্রামে বসবাস করেন। তিনি সেখানে কাঁচামালের ব্যবসা করেন বলে জানান।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বেইলি রোডের বেইলি স্কয়ার সরকারি ভবনের ২ নম্বর ভবনের ৫ম তলার ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন সড়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব রবিউল ইসলাম। তার স্ত্রী সোমা ও ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে সিজন এক সঙ্গে থাকেন। স্ত্রী সোমা সেনাকল্যাণ ভবনের ট্রাস্ট ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেও জানা গেছে।  

বেইলি স্কোয়ারের ওই বাসায় গিয়ে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বাসা তালাবদ্ধ দেখা যায়। অভিযোগের ভিত্তিতে রমনা থানার উপ পরিদর্শক শরীফুল ইসলামও ওই বাড়ি পরিদর্শন করেন।

এ বিষয় সড়ক মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্যারের বাসায় দুইজন মহিলা কাজ করেন। একজন কাজ করে চলে যায় অন্যজন বাসার ভেতরেই থাকতেন। আমি দেখেছি ওই কাজের মহিলাকে প্রায় সময় বাসায় তালা দিয়ে রেখে যেতে। ’

তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন রাতে ৮ টা থেকে সাড়ে ৮টার দিকে গাড়ির চাবি জমা দিতে যাইতাম। তখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা শুনতাম। কাজের ওই মহিলাকে বিভিন্ন বিশ্রি ভাষায় গালাগাল করা হতো, মাঝে মাঝে চুল টান দিতেও দেখতাম।

পরে আমি কাজের বুয়া জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, মালিকের স্ত্রী ও তার ছেলের অমানষিক নির্যাতনের কথা। তিনি একটা ফোন নাম্বার দিয়ে অনেক আকুতি করে বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলিযে দাও। পরে তার ছেলের সঙ্গে কথা বলি। ’

এ অভিযোগের বিষয়ে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গৃহকর্মী জাহানারা বেগমের ছেলে বাচ্চু ও তার স্ত্রী আমাদের জানিয়েছে যে তাদের সঙ্গে তার মাকে দেখা করতে দেয়া হয় না। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এখন বাচ্চু ও তার স্ত্রী থানায় আছেন।

স্যার (রবিউল ইসলাম) বাসায় নেই। তিনি একটি বিযের দাওয়াত খেতে গেছেন। স্যার আসবে রাত ১০টার দিকে। স্যার আসলে বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।   

মুঠোফোনে কথা হয় সিনিয়র সহকারী সচিব রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “কাউকে আমরা বাসায় বন্দি করে নির্যাতন করিনি। বৃদ্ধা মানুষ তাকে আটকে রেখেই বাইরে যেতাম। তবে কোনো নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এসজেএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।