ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমরা পারি’ এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগুতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
‘আমরা পারি’ এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগুতে হবে ছবি : প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং

ঢাকা: ‘আমরা পারি’ এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসুন সকলে মিলে আমাদের মাতৃভূমিকে উন্নত সমৃদ্ধ করি। বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করি।



বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘গত সাত বছরে এইটুক করতে পেরেছি, আমাদের দেশের মানুষের ভিতরে একটা মর্যাদা বোধ ফিরে এসেছে। আমরা যে পারি সে আর্ত্মবিশ্বাসটা ফিরে এসেছে। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ’

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠাতে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের একটা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। কারো কাছে হাত পেতে নয় আমাদের সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত করতে পারি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে হবে। আর তা সম্ভব যদি আমরা আর্ত-সামাজিক উন্নতি করতে পারি।

রক্তের বিনিময়ে পাওয়া মাতৃভাষাকে ধারন করা এবং ভাষার মর্যাদাকে রক্ষা করতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

মায়ের ভাষার মর্যাদার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মাতৃভাষার ওপর আর কি থাকতে পারে। আমাদের বাংলা ভাষার যে মাধুর্য্য, যে মর্যাদা তার প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে।

এ সময় তিনি মধ্য যুগের কবি আব্দুল হাকিম এর বঙ্গবাণী কবিতার দুটি চরণ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, কবি বলেছেন, “যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। ”

আগে মাতৃভাষা শেখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা গ্রহণ ও কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন ভাষা শিখতে হয়। কিন্তু মাতৃভাষাকে ভুলে গেলে চলবে না। মাতৃভাষা শিখে তারপর অন্য ভাষাটা শিখলে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষাটা হয়।

তিনি বলেন, আমাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের প্রয়োজনে। আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে মত বিনিময় করতে গেলে যে ভাষা, মানুষ পর্যায়ক্রমিক ভাবে সে ভাষা গ্রহণ করে। কিন্তু অন্য ভাষার শেখার সঙ্গে আমাদের নিজের ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করতে হবে।

মায়ের ভাষা রক্ষায় রক্তাক্ত সংগ্রামের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, মায়ের ভাষায় কথা বলতে, মাকে মা বলার অধিকার আদায় করতে হয়েছে সংগ্রামের পথ বেয়ে।

তিনি বলেন, বাঙালি জাতিকে জাতি হিসেবে ধ্বংস করতে ভাষার ওপর আঘাত হানা হয়। উর্দুকে ভাষা হিসেবে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারির মর্যাদার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু দিবস নয়, ২১ আমাদের চেতনার উন্মেষ ঘটায়, আমাদের চেতনাবোধ, আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করে। যার পথ বেয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।

আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা বিশ্ব ২১ ফেব্রুয়ারিকে পালন করা ও মর্যাদা দেওয়া হয়।

সরকার বিভিন্ন ভাষার মানুষের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিহাসকে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে আরো উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনিস্টিটিউট এর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব সারা বিশ্বে যে সকল মাতৃভাষা রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। আমরা আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইন্টিটিউট গঠন করেছি। যেখানে বিভিন্ন মাতৃভাষাকে সংরক্ষন করা হচ্ছে।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমান। আমাদের সংবিধানেও সে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও প্রশংসনীয় অবদান রাখায় ১৬ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।

এ বছর একুশে পদকে ভূষিত হলেন, ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, ডা. সাইদ হায়দার ও ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া (মরণোত্তর)।

শিল্পকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অভিনেত্রী জাহানারা আহমেদ, শাস্ত্রীয় সংগীতগুরু পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী, সংগীত শিল্পী শাহীন সামাদ, নৃত্যশিল্পী আমানুল হক ও চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন (মরণোত্তর)।
 
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক। আর সাংবাদিকতায় এ পদক পেয়েছেন প্রবীণ সাংবাদিক তোয়াব খান।
 
গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখায় অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ এবং মংছেন চীং মংছিন। আর ভাষা ও সাহিত্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

একুশে পদক প্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

পদক প্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বিরাট অবদান রেখেছেন। একুশে পদক পুরস্কার নয়, মর্যাদা। আপনারা যে অবদান রেখেছেন তার পুরস্কার হয় না। আপনারাদের মর্যাদা দিচ্ছি যেন আগামী প্রজন্ম আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে ভালোবাসে, দেশের কল্যানে কাজ করে।

তিনি আরো বলেন, দেশে আজ অনেকেই আছেন যাদের আমরা মূল্যায়ন করতে পারি নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে মূল্যায়ন করার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ। পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম।

বাংলাদেশ সময় ১৪৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এমইউএম/এমএমকে

দেশের মানুষের মর্যাদাবোধ ফিরে এসেছে, এটাই বড় অর্জন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।