বগুড়া: ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়ার দক্ষিণের শেষ সামীনা সীমাবাড়ী। শিবগঞ্জের রহবল উত্তর সীমানার শেষপ্রান্ত।
এসব স্পটে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা লেগেই আছে। তাতে ঝরে পড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। বেড়েই চলছে নিহতের তালিকা। আহতের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বরং এক ডেথস্পটেই ঝরে গেলো সাত তাজা প্রাণ!
মহাসড়কের অর্ধশত ডেথস্পটের মধ্যে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর বাজার অন্যতম একটি। এ স্পটে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
সর্বশেষ শনিবার (১২ নভেম্বর) দিনগত রাত একটার দিকে সারবোঝাই ও পুলিশ বহনকারী দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত হন কমপক্ষে ৬ জন।
আব্দুল আলিম, আরিফ ইসলাম, নজরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, মহিপুর বাজার এলাকায় এসে মহাসড়ক বেশ কয়েকটি বাঁক নিয়েছে। এই বাঁকের দু’পাশে মার্কেট ও বাজার। রয়েছে একটি স্কুল। এরপরও যানবাহন চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে এ বাঁক অতিক্রম করে গন্তব্যে ছোটেন। যে কারণে এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ঢাকা-বগুড়া ও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সীমাবাড়ীর বগুড়া বাজার, ররোয়া, বেতগাড়ী, ধনকুন্ডি, ঘোগাব্রিজ, ঘোগা বটতলা, ইটালি, ছোনকা, মির্জাপুর আমবাগান, মির্জাপুর বাজার, মদনপুর, কৃষ্ণপুর, মৎস্য খামার, শেরুয়া বটতলা, কাঁঠালতলা, হামছায়াপুর, ধুনটমোড়, বাসস্ট্যান্ড, কলেজরোড, হাজীপুর, মহিপুর বাজার, মহিপুর দুগ্ধ ও প্রাণী উন্নয়ন খামার, গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ড, দশমাইল, নয়মাইল ফিলিং স্টেশন, নয়মাইল বাজার, বি-ব্লক, মাঝিড়া, শাজাহানপুর বাসস্ট্যান্ড, বনানী, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, তেলিপুকুর, দোয়েল পাম্প, চারমাথা, মাটিডালী মোড়, নওদাপাড়া, বাঘোপাড়া, মহাস্থান, চন্ডিহারা, মোকামতলা, ফাঁসিতলা, রহবল সাধারণ মানুষের কাছে অন্যতম ডেথস্পট হিসেবে পরিচিত।
মহাসড়কের এসব বাঁকে বাঁকে বিপদ সংকেত সম্বলিত একাধিক সাইনবোর্ড টানানো আছে। এসব সাইনবোর্ডে চালকদের সতর্ক করে গাড়ি চালানোর জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক কথা ও চিহ্ন দেওয়া থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
জেলা বাস কোচ মিনিবাস ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা আবু রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, প্রশিক্ষণবিহীন চালকদের হাতে চাবি তুলে দিচ্ছেন যানবাহন মালিকরা। আবার সিংহভাগ চালক বয়সেও অপরিপক্ক।
এক্ষেত্রে গাড়ির মালিকরা শুধু বাড়তি ক্যাশ চান। বেশি ভাড়া মারার জন্য চালকরা ঘুম হারাম করে বেপরোয়া গতিতে বিভিন্নপ্রান্তে ছুটছেন। এতে করে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন এ শ্রমিক নেতা।
শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নতি করা প্রয়োজন। আশেপাশে গড়ে তোলা হাটবাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে ফেলতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংসহ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা গ্যারেজগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। বেপরোয়া গাড়ি চলাচল ঠেকাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দুর্ঘটনারোধে চালকদের সচেতন হতে হবে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক আইন পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার, ওভারটেকিং ও চোখে ঘুম নিয়ে কোনোভাবেই গাড়ি চালানো যাবে না। কিন্তু চালকরা এসব কোনো কিছুই মানে না।
তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনা ঠেকাতে হাইওয়ে পুলিশ স্পিড গান মেশিন ব্যবহার করছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে নিয়মিত চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে সীমিত জনবল নিয়ে দুর্ঘটনারোধে হাইওয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন এ কর্মকর্তা।
**বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যসহ নিহত ৭
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
এমবিএইচ/জেডএস