ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিষাদে ছেয়ে গেল আশীর্বাদের আনন্দ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
বিষাদে ছেয়ে গেল আশীর্বাদের আনন্দ

আশীর্বাদ করার জন্য পাত্রের বাড়িতে গিয়েই জানতে পারলেন পাত্র পুলিশ কনস্টেবল প্রণব চন্দ্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সঙ্গে সঙ্গেই বিষাদে ছেয়ে গেল আশীর্বাদের সব আনন্দ।

লালমনিরহাট: আশীর্বাদ করার জন্য পাত্রের বাড়িতে গিয়েই জানতে পারলেন পাত্র পুলিশ কনস্টেবল প্রণব চন্দ্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সঙ্গে সঙ্গেই বিষাদে ছেয়ে গেল আশীর্বাদের সব আনন্দ।

প্রণব চন্দ্র শনিবার (১২ নভেম্বর) মধ্যরাতে বগুড়ার শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের উত্তর ঘনেশ্যাম গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মহানন্দ রায়ের ছেলে।

অক্টোবর মাসে ছুটিতে বাড়ি এসে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী গ্রামের সুকুমার রায়ের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের জন্য পছন্দ করেন প্রণব। মেয়ে পছন্দ হওয়ায় পাত্রের বাড়ির লোকজনের আমন্ত্রণে মেয়ের বাবা সুকুমার রায় আশীর্বাদ ও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য হবু জামাইয়ের বাড়িতে আসেন।
 
সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোববার (১৩ নভেম্বর) সকালে প্রণবের বাড়িতে আশীর্বাদের আয়োজন চলছিল। এ সময় মোবাইল ফোনে খবর আসে বগুড়া শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যের সঙ্গে প্রণব চন্দ্র নিহত হয়েছেন।

এ খবরে মুহূর্তের মধ্যেই আশীর্বাদের আয়োজন বিষাদে পরিণত হয়ে যায়। পুরো এলাকায় আনন্দের পরিবর্তে কান্নার রোল পড়ে যায়। বিষাদে ভারী হয়ে উঠে পুরো এলাকা।

সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে প্রণব চন্দ্রকে হারিয়ে বৃদ্ধা মা পুর্নিমা রায় শোকে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। বাবা মহানন্দ রায় ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক হয়ে পড়েছেন।

রোববার বিকেল ৩টায় প্রণবের উত্তর ঘনেশ্যাম গ্রামের বাড়িতে প্রবেশ করেই এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

স্থানীয় তুষভান্ডার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ২০১১ সালের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগ দেন প্রণব। ট্রেনিং শেষে প্রথমে রাজশাহীতে পরে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন।

দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রণব চন্দ্র ছোট। বড় ভাই মনোরঞ্জ রায় বাবার ছোট সংসারটা পরিচালনা করছেন। মূলত বাবার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ও প্রণবের আয়ে চলে তাদের সংসার।

বড় ভাই মনোরঞ্জ জানান, গত মাসে ছুটিতে বাড়ি এসে বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করেন প্রণব। তার পছন্দের মেয়ের সঙ্গে বিয়ের জন্য আজ ছিল তার আশীর্বাদের দিন। এ মুহূর্তে মোবাইলে তার মৃত্যুর খবর পান তারা।

তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর ইসলাম জানান, পুলিশ সদস্য প্রণবের মরদেহ এখনো গ্রামের বাড়িতে আসেনি। এলে সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে।

কালীগঞ্জ থানার  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাত বাংলানিউজকে জানান, মরদেহ গ্রামে নিয়ে আসার ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
 
শনিবার (১২ নভেম্বর) মধ্যরাতে বগুড়া শেরপুর উপজেলায় পুলিশ সদস্যদের বহনকারী ট্রাকের সঙ্গে সারবোঝাই একটি ট্রাকের সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন নিহত হয়। ৫ পুলিশ সদস্যের মধ্যে প্রণব চন্দ্র লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।

কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনসের সদস্যরা ভাড়া করা একটি ট্রাকে পোশাকসহ অন্যান্য মালামাল আনতে ও সরকারি কাজে ঢাকা হেড কোয়ার্টার্সে যাচ্ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।