সড়কের বুকে বাসন্তী রঙ আর বর্ণিল আলপনা ইঙ্গিত দিচ্ছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণেরই। আবহে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান একুশে ফেব্রুয়ারি
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
ফুলের দোকানে তৈরি হচ্ছে রঙ-বেরঙের ডালা। সোমবার সকাল গড়িয়ে যখন দুপুর, তখন সব আয়োজন ও প্রস্তুতিই যেনো প্রায় শেষ। তবে একুশের প্রথম প্রহরের আগ পর্যন্ত ব্যস্ততার এই রেশ কাটবে না। প্রভাত ফেরির অপেক্ষায় রাজশাহীর ফুল ব্যবসায়ীদের আরও একটি নির্ঘুম রাত কাটবে।
মঙ্গলবার পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঁকি দিতেই উত্তরের এই শহরজুড়ে লাখো কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হবে অমর একুশের প্রভাত ফেরির চিরম্লান গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...। ’রাজশাহীর নিউমার্কেট এলাকার ফুল ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন বাংলানউজকে জানান, একুশে পালনে ফুলের ডালা তৈরির কাজ সামলাতে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে যারা শ্রদ্ধা জানাবেন তাদের সন্ধ্যার মধ্যেই ডেলিভারি দিতে হবে। আর যারা মঙ্গলবার প্রভাত ফেরিতে যাবেন তাদের ডেলিভারি দেওয়া হবে রাত ১১টার মধ্যে।
তাই সন্ধ্যার মধ্যেই ডালা তৈরির সব কাজ শেষ করতে হবে। এরপরও চাপ ও চাহিদা থাকায় সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ফুলের ডালা তৈরির কাজ চলবে তাদের। এ জন্য সকাল থেকে বাড়তি লোক দিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান নিউমার্কেট এলাকার ওই ফুল ব্যবসায়ী।
এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের লক্ষ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে জানান জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন।
এজন্য রাজশাহীর প্রতিটি শহীদ মিনার ও আশ-পাশের এলাকায় সোমবার মধ্যরাত থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
কর্মসূচি অনুযায়ী রাজশাহী শহীদ মিনারে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবসটি শুরু করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি-আধাসরকারি ও বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সঠিক নিয়মে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হবে।
এছাড়া মহানগরীর সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বাংলা বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্থাসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণ করবেন।
রাজশাহী শিশু একাডেমিতে সকালে চিত্রাঙ্কন এবং বাংলায় সুন্দর হাতের লেখা, দুপুরে ভাষার গান/দেশাত্মবোধক গান এবং রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার বাদ জোহর মহানগরের হেতেমখাঁ মসজিদ কমপ্লেক্সসহ সব মসজিদে ও সুবিধামত সময়ে অন্যান্য উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে ভাষা সৈনিকদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় মহানগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়, আলুপট্টি বঙ্গবন্ধু চত্বর ও সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ চলচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মমুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বাংলানউজকে জানান, একুশের প্রথম প্রহর থেকে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হবে। প্রভাতফেরির সময় রাজশাহী কলেজ শহীদ মিমিনার, ভুবন মোহন পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্ট শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ শহীদ মিনারগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে রাখতেও নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। এছাড়া মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশসহ বিভিন্ন গেয়েন্দা সংস্থার সদস্যারা মাঠে থাকবেন বলেও জানান মহানগর পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এসএস/এএটি/আরআই