একুশের প্রথম প্রহর থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন খুলনার সর্বস্তরের মানুষ। দিনটি পালন উপলক্ষে শহীদ মিনারসহ খুলনাজুড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৭ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে দিনভর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
রাত ১২টা ০১ মিনিটে শহীদ হাদিস পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, অন্যান্য দফতর ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হবে।
ভোর ছয়টায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সকল বেসরকারি ভবনে সঠিক নিয়মে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংগঠন, সাংস্কৃতিক জোট ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রভাতফেরির আয়োজন করবে।
সকাল ৯টায় নগর ভবনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে বাদ জোহর বা সুবিধামতো সময়ে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাদ জোহর খুলনা কালেক্টরেট জামে মসজিদসহ সকল মসজিদে শহীদদের রুহের মাগফিরাত, দেশের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া কামনা এবং সুবিধামতো সময়ে মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে অনুরূপ বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বয়রা বিভাগীয় গণ-গ্রন্থাগার প্রাঙ্গনে অমর একুশের বইমেলায় বিকেল চারটায় আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
শহীদ হাদিস পার্ক ও খুলনা জাতিসংঘ শিশু পার্কে সন্ধ্যায় খুলনা জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও একুশের পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সুবিধামতো সময়ে সিনেমা হলগুলোতে সিনেমা স্লাইড প্রদর্শন করা হবে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে স্থানীয় পত্রিকাগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাংলা বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুনে সজ্জিত করা হবে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খুলনা জিলা স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা আন্দোলনে খুলনার অবদান’ শীর্ষক ৩টি বিভাগে যথাক্রমে অনুর্ধ্ব ৩০০ ও ৫০০ শব্দের রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবারের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হবে।
স্কুল-কলেজে বই পাঠ, স্বরচিত ছড়া ও কবিতা প্রতিযোগিতা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একুশে সংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে নিজস্ব কার্যালয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় শিশু একাডেমির উদ্যোগে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ করা হবে।
খুলনা সিটি করর্পোরেশনের নিরাপত্তা সুপার আলমগীর কবীর বিশ্বাস সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, শহীদ হাদিস পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শহীদ মিনার এলাকায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এদিকে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পুষ্পার্ঘ্যসহ শ্রদ্ধাঞ্জলির নানা উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত খুলনার ফুল ব্যবসায়ীরা।
মহানগরীর ফারাজীপাড়া ফুল মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুষ্পস্তবক ও রিংমালা বানানোর ধুম লেগেছে। কারিগররা রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন এসব তৈরিতে। রাশি রাশি ফুল, বাঁশের চাটা আর শোলায় তৈরি হচ্ছে ছোট বড় ও মাঝারি আকারের মালা ও পুষ্পস্তবক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এমআরএম/এএসআর