রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎস্যভবন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ফার্মগেট, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, সায়েদাবাদ, মানিকনগর, কমলাপুর, মুগদা, বাসাবো, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, বারিধারা ইত্যাদি এলাকার একাধিক বাসে চড়ে এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ কথাই জানা যায়।
যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানীর রাস্তায় বাসগুলো মাঝেমধ্যে যেন ‘রেসিংয়ে’ অবতীর্ণ হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী এটিসিএল, এফটিসিএল, মিডওয়ে, বাহন, ৮ নম্বর (গাবতলী-যাত্রাবাড়ী), ৩ নম্বর (সুপ্রভাত) ও তুরাগ পরিবহনের যাত্রীরা বাংলানিউজকে বলেন, এই বড় বড় পরিবহন কোম্পানির বাসগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ‘রেসিংয়ে’ মেতে ওঠে রাস্তায়। সিরিয়ালের গাড়ি হলেও একটি অপরটিকে পেছনে ফেলতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সামনের বাস না সরলে পেছনের বাসটা সজোরে ধাক্কাও মারছে। আবার একটি বাস আরেকটির সঙ্গে গা ঘেঁষে এমনভাবে চলছে, কোনোটি খানিক চাপ দিলেই ঘটে যেতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। এমরধ্যেও ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা, দু’টি গাড়ি গা ঘেঁষে পাল্লা দিয়ে চলতে গেলে একসময় ধাক্কা খেয়ে কাঁচ ভেঙে আহত হচ্ছেন অন্য বাসের যাত্রী। তাছাড়া, যাত্রী ওঠানামার সময় একটি গাড়ির আরেকটি গাড়িকে সাইড না দেওয়ার ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটছে।
সুপ্রভাত, আজমেরী, শিকড়, বোরাক, আনন্দ পরিবহনের বাসগুলোর বিরুদ্ধেও আছে শৃঙ্খলা ও নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ। তারা রাস্তায় এমনভাবে দাঁড়াচ্ছে যেন সিরিয়ালে পেছনের গাড়িটা আগে চলে যেতে না পারে, কিন্তু এতে সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজটের।
যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই প্রতিটি স্ট্যান্ডে বাসচালকরা বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি রাখছেন, যাত্রী তুলছেন। আসন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ স্ট্যান্ড ছাড়তে চাইছেন না। যাত্রীদের চাপাচাপিতে বাসটি যখন অপর স্ট্যান্ডের দিকে ছুটে যায়, তখন এর গতি হয়ে ওঠে বেপরোয়া। এক্ষেত্রেও কে কার আগে যাবে, তা নিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। এমনকি পথচারী পারাপার মোড় এবং স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের সামনেও এই বেপরোয়া গতির লাগাম টানা হয় না।
এরমধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ফ্লাইওভারে উঠলে সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, এতোটুকুন রাস্তায় মোটরসাইকেলের মতো বাঁক নিতেও শঙ্কিত হয় না চালকেরা। এজন্য যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করেও দমাতে পারেন না বাসচালকদের।
এমন গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেক সময় পুরো বাসটাই উল্টে গিয়ে যাত্রীদের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী রুটে চলাচলকারী তুরাগ পরিবহনের বাসের চালক আমিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাস চালাই। এতে মালিকের এক টাকাও লোকসান নেই। সন্ধ্যার পর তাদের গুনে-গুনে এক হাজার টাকার বেশি দিতে হয়। তাই যাত্রী তুলতে প্রতিযোগিতা না করলে আমরা আমাদের পরিশ্রমের টাকা পাবো কোথায়?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঢাকায় এখন দক্ষ ও লাইসেন্সধারী চালকের খুবই অভাব রয়েছে। রয়েছে তাদের শিক্ষারও অভাব। তাই এলোমেলো বাস চালাতে তাদের সমস্যা হয় না। তাদের চিন্তা চেতনায় থাকে কার আগে কে যাবে।
মৎস্য ভবন ও রমনা এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আকতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের চোখের দেখা বেশির ভাগ বাস সু-শৃঙ্খলভাবে চলাচল করে। তবে দু’একটা বাস এলোমেলোভাবে চলাচল করে। যারা এ কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করা হয়।
এ ব্যাপারে রমনা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, যারা এ ধরনের আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি ও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আইন ভঙ্গ করলে চালক ও গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর সভাপতি ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, যেসব চালক এলোপাতাড়ি বাস চালান তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে সব বাস মালিক এবং চালক সর্তক হবে। এতে করে বাস দুর্ঘটনা কমবে।
এক পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে ১৮০টি কোম্পানির নামে প্রায় পাঁচ হাজার বাস ও মিনিবাস ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। অটোরিকশা রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার, আর হিউম্যান হলার প্রায় দুই হাজার। প্রায় ৮০ হাজার রিকশার লাইসেন্স থাকলেও চলাচল করছে পাঁচ লক্ষাধিক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
ওএফ/এমএন/এএটি/এইচএ/