ঢাকা, সোমবার, ২০ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু চিরদিনই বাঙালির হৃদয়ে থাকবেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
বঙ্গবন্ধু চিরদিনই বাঙালির হৃদয়ে থাকবেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু চিরদিন বাঙালি জাতির হৃদয়ে থাকবেন।

শুক্রবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চে ভাষণের ওপর আয়োজিত সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এ সেমিনারের আয়োজন করে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে আজ নেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তিনি এই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, শুধু বাংলাদেশ কেন আজকে সারা বিশ্বব্যাপীই তো তার অবদানের কথা স্মরণ করে। কাজেই তিনি অমর, তিনি অক্ষয়, তিনি অব্যয়। তিনি চিরদিন এই বাঙালি জাতির হৃদয়ে থাকবেন। কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ সুচিন্তিত ছিলো বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, বিজয় পেয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং এই ভূবনের নাম যে বাংলাদেশ হবে তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত তার নিজের নেওয়া। জাতীয় সংগীত এই গানটি করবেন, এই সিদ্ধান্তটা তার বহু আগেই নেওয়া ছিল। জয় বাংলা স্লোগানটা মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া ছিল ছাত্রলীগকে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন, ধাপে ধাপে। জাতিকে একত্রিত করে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রগঠনের চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জীবনের ঝুঁ‍কি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন।

তিনি বলেন, ১৯৭০ এর নির্বাচনে ফলাফল কী হবে সেটা তিনি আগে থেকেই জানতেন। এটা তিনি লন্ডনে বসেই বলেছিলেন, কিন্তু সঙ্গত কারণে প্রকাশ্যে বলেননি। কারণ তিনি কখনোই বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে চাননি। তিনি বিদেশিদের সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় একটা কথা বারবার বলতেন, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে পারে না।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার যে বাণীটা আপনারা পান সেটা আগেই প্রস্তুত করা ছিল। এখন ৩২ নম্বরের লাইব্রেরিতে যে টেলিফোনটা ছিল সেই টেলিফোন দিয়ে শওকত সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের নির্দেশ দেওয়া ছিল, আক্রমণের সাথে সাথে বার্তাটা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। বার্তাটা দেওয়ার পরপরই আমদের বাড়িতে আক্রমণ করে এবং বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলায় জেলায় বক্তৃতা দিলেন মামলা করা হলো, গ্রেপ্তার করা হলো, জামিন পেলেন, আবার গ্রেফতার হলেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। আগরতলা মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো, তখন তাকে ফাঁসি দেওয়ার একটা ষড়যন্ত্র ছিল। বাঙালি জাতি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনে।

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদান এবং তিনিই যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সেটা এক সময় মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।

৭ই মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণের আগে চার দিক থেকে নানা উপদেশ ও পয়েন্ট আসতে লাগলো। সেদিন বক্তব্য দিতে যাওয়া আগে আমার ‍মা বাবাকে বলেছিলেন তুমি এদেশের মানুষকে চেন। সারা জীবন তুমি মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছ। কারো কথা শোনার দরকার নেই। তোমার মনে যা চাইবে তাই বলবে। তোমার সামনে লাখো জনতা থাকবে। পেছনে থাকবে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন জাতির পিতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বাঙালির উদ্দেশে তার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। যেখানে তিনি সকল দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে।

’৭৫ পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই একটি ভাষণ দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ বাজানোর জন্য আমাদের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বহু নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। একটা সময় বঙ্গবন্ধুর নাম এমনভাবে নিষিদ্ধ ছিল যে, অনেকগুলো ছবির মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা লুকিয়ে রাখতে হতো।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী সময়ে ইতিহাস বিকৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কয়েকটা প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারেনি।

নতুন প্রজন্মের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, যারা হয়তো ৭৫ এর কিছু পূর্বে জন্ম নিয়েছে এবং তার মধ্য দিয়ে যারা বড়ো হয়ে উঠেছে। তারা ৭ মার্চের ভাষণকে উপলব্ধি করছে, এই নিয়ে চিন্তা করছে। সঠিক ইতিহাস তুলে ধরছে, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মশিউর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশেনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত, সমাজ বিজ্ঞানের আরেক অধ্যাপক জিনাত হুদা।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭/আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা
এমইউএম/আরআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।