মুফতি হান্নান ও অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে এ কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।
অন্যজন দেলোয়ার হোসেন রিপনকে রাখা হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।
রোববার (১৯ মার্চ) কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রায় পুনর্বিবেচনায় আসামিদের রিভিউ আবেদন খারিজের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তবে রিভিউ মামলার রায়সহ আদালতের কাগজপত্র এখনও কারাগারে আসেনি। কাগজপত্র হাতে পেলে ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার’।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চ আমাদের এখানে সব সময় প্রস্তুত থাকে’।
অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার স্থায়ী বাসিন্দা রিপন সেখানে আছেন জানিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সগির মিয়া জানান, তারাও কাগজপত্র পাননি।
হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিন জঙ্গির রিভিউ আবেদন খারিজ করে সকালে রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
ফলে হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকরে এখন আর কোনো আইনি বাধা নেই। তবে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারবেন তারা। এ আবেদন না জানালে বা তা প্রত্যাখ্যাত হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ফাঁসি কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে আসামিদের আবেদন খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত।
বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দাল আপিল না করায় তাদের দণ্ডও বহাল থাকে।
গত ১৮ জানুয়ারি ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন মুফতি হান্নান ও বিপুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী। আবেদনে ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাসের আরজি জানানো হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।
হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।
মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন।
প্রায় সাত বছর পর গত বছরের ০৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ০৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ০৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আপিল বিভাগের রায় যাওয়ার পর বিচারিক আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। গত ০৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে এ পরোয়ানা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পড়ে শোনানো হয়।
** রিভিউ খারিজ, মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি বহাল
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ মার্চ ১৯, ২০১৭
এজেডএস/আরআইএস/এএসআর