ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আশাহত রাকিবের মা-বাবা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৭
আশাহত রাকিবের মা-বাবা! রাকিবের ছবি হাতে বাবা ও মা। ছবি: মানজারুল ইসলাম- বাংলানিউজ

খুলনা: বাসার সামনের সড়কে গালে হাত দিয়ে নিজ রিকশায় বসে আছেন রাকিবের বাবা নূরুল আলম হাওলাদার। সকাল থেকে বসেছিলেন টেলিভিশনের সামনে।

নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বাতিল করে রাকিব হত্যার দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায় শুনে হতাশ হয়ে দুপুর গড়িয়ে গেলেও আর কাজে বের হননি নুরুল আলম।

মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) রায় ঘোষণার পর থেকে অনেকটা নিস্তব্ধ হয়ে টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের বাসার সামনে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কি আশা করেছিলাম আর কি হলো। ভেবেছিলাম ফাঁসির রায় বহাল থাকবে। এজন্য সকাল থেকে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলাম। কিন্তু ফাঁসি বহাল না রেখে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো। এ রায় কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা হতাশ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি, ফাঁসির রায় যেনো বহাল থাকে।

রাকিবের বাসায় ঢুকে দেখা যায়, পুরো বাসার পরিবেশ থমথমে। ছেলের ছবি হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন নিহত রাকিবের মা লাকি বেগম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট। আশা করেছিলাম, আমার ছেলের হত্যাকারী দুই আসামি গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু খানের ফাঁসি বহাল থাকবে। এতোদিন বুকে পাথর বেঁধে অপেক্ষায় ছিলাম খুনিদের ফাঁসি হবে। এ রায়ে সে পাথর সরলো না। আমার ছেলের আত্মা শান্তি পেলো না, আমিও শান্তি পেলাম না।

এরা জেল থেকে বের হয়ে আমার মেয়ের উপর বা আমাদের উপর হামলা করবে এমন আশঙ্কা করেন তিনি। রাকিবের বাবা।   ছবি: মানজারুল ইসলাম- বাংলানিউজএদিকে রাকিব হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলার সমন্বয়কারী মমিনুল ইসলাম রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, উচ্চ আদালত রাকিব হত্যার আসামিদের ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ায় আমরা হতাশ। উচ্চ আদালতে রাকিবের আইনজীবীরা জানিয়েছেন তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ করবেন।

পেটে বাতাস ঢুকিয়ে খুলনার শিশু রাকিব হত্যার দায়ে গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু খানকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাকিব হত্যার ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিল খারিজ এবং বিচারিক আদালতের রায় পরিমার্জন করে এ রায় দেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

দেশের ইতিহাসে বিচারিক আদালতে স্বল্প সময়ে বিচার নিশ্চিত হওয়ার পর গত ১০ জানুয়ারি হাইকোর্টে শিশু রাকিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ২৯ মার্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন উচ্চ আদালত।

হাইকোর্টে ১১ কার্যদিবসের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এএসএম আবদুল মুবিন ও গোলাম মো. চৌধুরী আলাল।

১২ বছর বয়সী রাকিব এক সময় খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে শরীফের মোটর ওয়ার্কশপে কাজ করতো। কাজ ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট তাকে হত্যা করেন শরীফ ও তার দূর সম্পর্কের চাচা মিন্টু।  

ওই গ্যারেজে আটকে রেখে কমপ্রেসারের মাধ্যমে মলদ্বারে বাতাস ঢোকানো হলে রাকিবের পেটের ভেতরের নাড়ি, মলদ্বার, মূত্রথলি ফেটে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পর রাকিবের বাবা নুরুল আলম বাদী হয়ে গ্যারেজ মালিক শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলায় খুব অল্প সময়ে বিচারকাজ শেষে ওই বছরের ৮ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। রায়ে মো. শরীফ ও মিন্টু খানকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিউটি বেগমকে খালাস দেন আদালত।

এ রায় ঘোষণার দ্বিতীয় দিনে নিম্ন আদালতের রায়ের নথিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাইকোর্টে পৌঁছে। পরে খালাস চেয়ে আপিল করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৭
আরআইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।