সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে মামলা করে রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ যখন আদালত থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন লাল সিগনেচার পেন দিয়ে নিজ হাতের একটি লেখা প্রদর্শন করছিলেন। যাতে লেখা ছিল ‘I appeal for a fair investigation and justice to my daughter’।
মামলার পর ডা. মোহাম্মদ আতিফের আইনজীবী কামরুল মনির সাংবাদিকদের জানান, মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে রেকর্ড ও তদন্ত করার জন্য শাহ মখদুম থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে রাওদার বান্ধবী কাশ্মিরী ছাত্রী সিরাত পারভীন ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাওদাকে ফলের জুস খেতে দিয়েছিল।
বিষয়টি ওই দিনই রাওদা তার মাকে মোবাইলে জানিয়েছিল। এছাড়া মৃত্যুর পর সবার আগে সিরাতই চিৎকার দিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছিল। পরে সবাইকে নিয়ে দরজা ভেঙ্গে রাওদার রুমে ঢোকার কথা বললেও তার ছিটকানি ভাঙ্গার কোনো চিহ্ন মেলেনি। এছাড়া সেখানে কোনো টেবিল ছিল না। যে চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে রাওদা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। আর চেয়ারে উঠলেও ফ্যান হাতে পাওয়ার কথা নয়।
ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। যদিও রাওদার বাবা পর্যবেক্ষণ করে পেয়েছেন মেয়ের গলায় ওড়না নয় দড়ির দাগ ছিল। এই থেকে রাওদার বাবার ধারণা তার মেয়েকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হত্যা করে মরদেহ তার বেডে রাখা হয়েছে। এরপর মরদেহ নামানোসহ আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে হত্যাকারী। তিনি এর সঠিক তদন্ত চান।
এদিকে, মামলার পর থেকেই গুঞ্জন উঠেছে শিগগিরই পুনঃময়নাতদন্তের জন্য রাওদার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। এমনটি করা হতে পারে বলেই অনেক চিন্তা-ভাবনার পর রাওদার মরদেহ মালদ্বীপ না নিয়ে রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছিল।
এদিকে, রাওদার আত্মহত্যার ঘটনাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। এছাড়া মালদ্বীপ থেকে আসা দুই পুলিশ কর্মকর্তা গত শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) ঘটনা তদন্ত শেষে দেশে ফিরে গেছেন। তবে যাওয়ার আগে তারা এই ব্যাপারে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি।
এর আগে প্রখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা রাওদা আতিফের (২০) মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে মামলা করেন তার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি করেন তিনি। রাওদার বাবার পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল মনির।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বের হওয়ার সময় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মামলার আভাস দেন রাওদার বাবা।
রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ তখন জানান, রাজশাহী এসে মেয়ের মরদেহ দেখার পর থেকেই তিনি আত্মহত্যার ঘটনা মানতে পারছেন না। তাই ময়নাদন্তের রিপোর্ট চ্যালেঞ্জ করে মেয়ের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য জানতে হত্যা মামলা করতে চান। আজ সেই মামলায় রাওদার বান্ধবী কাশ্মিরী ছাত্রী সিরাত পারভিনকে আসামি করা হয়েছে। একই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং ছাত্রী হোস্টেলের ওই ব্লকেই থাকেন সিরাত।
এর আগে মালদ্বীপের মডেল ও রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রাওদা আতিফের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মনসুর রহমানকে ওই টিমের প্রধান করা হয়।
অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- রামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক এনামুল হক ও সাবেক অধ্যাপক এমদাদুর রহমান।
ময়নাতদন্ত শেষে গত ১ এপ্রিল দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজশাহীর হেতমখাঁ গোরস্থানে রাওদা আতিফের মরদেহ দাফন করা হয়। পরে ওই দিন বিকেলেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়েছে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে অন্য কোথাও কোনো আঘাত বা নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ধর্ষণেরও কোনো আলামত মেলেনি। এরপরও পুলিশের আবেদনের কারণে কোনো ধরনের বিষক্রিয়ায় এই মৃত্যু হয়েছে কি-না জানতে তার ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে।
গত ২৯ মার্চ ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রাওদার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এই মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১৩তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাওদা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি নারী হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে উঠেছিলেন রাওদা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এসএস/জেডএস