বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ড. রক্তিম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুব্রত পাল রাওদার মরদেহ তোলার সময় তাকে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
ড. রক্তিম চৌধুরী জানিয়েছেন, মরদেহ তোলার সময় এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তিনি কবর থেকে মরদেহ তোলার সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে রাওদার মরদেহ কোথায় ময়নাতদন্ত করা হবে তা জানাতে চাননি তিনি।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আসমাউল হক কবর থেকে রাওদার মরদেহ তুলতে গত রোববার (১৬ এপ্রিল) রাজশাহীর মুখ্য মহানগর আদালতে আবেদন করেন। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) মরদেহ উত্তোলনের অনুমতি মেলে।
গত ২৯ মার্চ রাজশাহীর নওদাপাড়ায় ইসলামী মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাওদার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাওদা এ কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। মালদ্বীপের একজন উঠতি মডেল হিসেবে মাত্র বিশ বছরেই রাওদার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ২০১৬ সালে ভারতের প্রখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ কন্যা হন সদ্য টিন পার করা মালদ্বীপের এ মেয়ে।
রাওদার মরদেহ উদ্ধারের দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছিল, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মহানগরীর শাহ মখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে রাওদার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. মনসুর রহমানকে প্রধান করে রাওদার মরদেহ ময়নাতদন্তে তিন সদস্যর একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাওদা আত্মহত্যা করেছেন। পরে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাওদাকে রাজশাহীর হেতেমখাঁ গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তাও রাজশাহীতে গিয়ে ঘটনা তদন্ত করেন।
তবে দেশে ফিরে গিয়ে তারাও জানান যে, রাওদাকে হত্যার কোনো আলামত বা প্রমাণ পাননি। এছাড়া রাওদার মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, রাওদা আত্মহত্যা করেছেন।
কিন্তু গত ১০ এপ্রিল রাজশাহীর আদালতে হত্যা মামলা করেন রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। এরপর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন।
মামলায় রাওদার বান্ধবী ভারতের কাশ্মীরি নাগরিক সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে সিরাতের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। কেবল হত্যার প্রমাণ মিললেই তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আসমাউল হক।
এদিকে, রাওদার মৃত্যুর কারণ উৎঘাটনে তার রুম থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে ওই প্রতিবেদনও ঢাকা থেকে আসেনি।
পুলিশ হেড কোয়াটারের নির্দেশে গত ১৩ এপ্রিল আত্মহত্যা ও হত্যার দুই মামলাই সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক মামলা দু’টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়েই তিনি রাওদার মরদেহ পুনরায় ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
এসএস/জেডএস