‘প্রতিমাসে বন্দিদেরকে নিয়ে দরবার করি। কার কী সমস্যা জানতে চাই, ওই ফাটাকেষ্টর মত আর কি’ –বললেন জাহাঙ্গীর কবির।
তার সঙ্গে আলাপে ছিলেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আবাদুজ্জামান শিমুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রশান্ত মিত্র। ছবি তুলেছেন সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট কাশেম হারুন।
প্রশ্ন: বন্দিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়?
উত্তর: প্রতিমাসেই বন্দিদেরকে নিয়ে একদম ওপেন দরবার করি। জিজ্ঞাসা করি কারো কোন কমপ্লেন থাকলে বলেন। একটু হেসে....‘ওই ফাটাকেষ্টর মত আরকি। এতে বন্দিরাও খুব খুশি। ’
আমরা বন্দিদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছি, তারা যেন সাফার না করে। সুযোগ না দিলে, সামনে যদি না যাই, তবে বন্দিরা অন্ধকারে থেকে যাবে। যে কারণে বন্দিদের জন্য নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করি। আমাদের জেলার, ডেপুটি জেলাররাও নিয়মিত তাদের সাথে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল খেলে। যদি কোন জায়গায় অত্যাচার, অনাচার, নিপীড়ন থাকে সেখানে ৫০ জনকে একসঙ্গে করাও রিস্কি। আর এখানে দেখেন হাজার হাজার আসামি একসাথে খেলছে, গান গাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুকের পাটা না থাকলে হাজার হাজার আসামিকে একসঙ্গে কেউ বের করে? এসব চেষ্টা করছি, যদি সব জায়গাতে এমন জবাবদিহিতা থাকে, তবে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না।
প্রশ্ন: দেশের অন্যান্য কারাগার প্রসঙ্গে কী বলবেন?
উত্তর: আমি প্রথম থেকেই চাইতাম কারাগারের সকল বিষয় একেবারে নিট এন্ড ক্লিন থাকুক। বাংলাদেশের জেলের দর্পনতো ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগার। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার যদি স্বচ্ছ থাকে বাংলাদেশ জেলের ভাবমূর্তি ভালো হবে। সেটাই আমরা চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: নতুন কারাগারে কোন সুবিধাটা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য?
উত্তর: পুরাতন কারাগারে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ওভার ক্রাউডিং। ঘিঞ্জি, স্যানিটারি সিস্টেমে সমস্যা ছিল। এতে বন্দিদের থাকায় অনেক কষ্ট হত। তবে এখানে ঐ প্রবলেমটা নেই। এখানে বন্দিদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। পরিবশেটা খোলামেলা, আলো-বাতাস পাচ্ছে, যা আগে ছিল না।
প্রশ্ন: বন্দিদের সাথে সাক্ষাতের নানা ভোগান্তির বিষয়ে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
উত্তর: প্রতিদিনই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেড়শ-দুইশ নতুন বন্দি আসে আবার দেড়শ’-দুইশ’ চলে যায়। নতুন বন্দিরা কোন ভবনে আছে সেটা না জানার কারণে তাদের আত্মীয়রা সমস্যায় পড়তো। এই কারাগারের ভেতরের সব ভবনে ও বাইরে মাইকের ব্যবস্থা রয়েছে। যেন বন্দিদের ডাকা হলে তারা শুনতে পারেন এবং বন্দিরা আসলে আত্মীয়রা শুনতে পারেন।
প্রশ্ন: কারাগারে ‘কেসকি ফাইল’ শব্দটি প্রচলিত আছে, এ বিষয়ে...
উত্তর: পুরাতন কারাগারে ‘কেসকি ফাইল’ বলে একটা শব্দ ছিল। কারাগারের জায়গা স্বল্পতার কারণে একজনের উপরে আরেক জন ঘুমানো। যা খুবই কষ্টের বিষয় ছিল। এখানে এ ধরনের কোন সুযোগই নাই। কারণ পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে।
প্রশ্ন: কারারক্ষীদের জন্য থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কী?
উত্তর: যে কোয়ার্টার আছে সেটা কর্মকর্তা, কর্মচারী, কারারক্ষীদের জন্য মোটামুটি পর্যাপ্ত। কিন্তু ব্যাচেলর কারারক্ষীদের জন্য একটি ব্যারাক আছে। আরেকটা ব্যারাক দ্রুতই নির্মাণ করা হবে।
প্রশ্ন: বন্দিদের জন্য প্রতিদিনের রান্নার ক্ষেত্রে লাকড়ি ছাড়া বিকল্প চিন্তা ভাবা হচ্ছে কী না?
উত্তর: আমরা খুব শীঘ্রই এলপিজি গ্যাসের স্টেশন করতে যাচ্ছি। বাইরে এলপিজি গ্যাসের ডিপো থাকবে ভেতরে পাইপ দিয়ে সাপ্লাই হবে। খুব তাড়াতাড়ি চালু করার জোর চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এজেডএস/এসজেএ/পিএম/আরআই
পড়ুন আগের দুই পর্ব
** ৫ টাকার লেনদেন হলেও সাসপেন্ড
** মায়ের কারণেই আজ আমি সিনিয়র জেল সুপার