ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ধানের পচনই হাওরের মাছের মৃত্যুর কারণ

বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
ধানের পচনই হাওরের মাছের মৃত্যুর কারণ ধানের পচনই হাওরের মাছের মৃত্যুর কারণ

বাকৃবি (ময়মনসিংহ): আগাম বৃষ্টির কারণে হাওরের অপরিপক্ক ধান তলিয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে তা পচে যায়। ফলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে পানির অম্লত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মৎস্য চাষ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক।

সিলেটের টাঙ্গুয়ার হাওর, জামালগঞ্জের হালির হাওর ও সুনামগঞ্জের দেখার হাওর পরিদর্শন এবং পরীক্ষা করে এসে তারা এ গবেষণা রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মাছের আকস্মিক মৃত্যুর ধরণ ও ব্যাপকতা দেখে বোঝা যায় যে, কোনো জীবাণু বাহিত রোগের কারণে মাছের মৃত্যু হয়নি। বিশেষজ্ঞ টিমের পরীক্ষা অনুযায়ী হালির হাওরের পানির অম্ল-ক্ষারের মাত্রা ছিল ৬.৬৬-৬.৮৩ ও অক্সিজেনের ব্যাপ্তি ছিল ৪.৩০-৪.৭৬। যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম। শুরুর দিকে এ অবস্থা আরও কম থাকায় মাছের অকাল মৃত্যু হয়েছে।

১২ চৈত্র বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের ধান তলিয়ে যায়, প্রায় ২২ দিন পর বৈশাখের ৫ তারিখে মাছের মড়ক দেখা দেয়। এ থেকে বোঝা যায় যে, যদি পানিতে কোনো ধরনের তেজষ্ক্রিয় পদার্থ থাকত তাহলে ঢলের পানি আসার শুরু থেকেই মাছের মরণ শুরু হত।

প্রথমদিকের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয় হাওরের পানিতে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইটের পরিমাণ বেশি থাকায় মাছের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পানিতে কোনো অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইটের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হাওরের সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, যে সমস্ত হাওরে, হাওরের মোট আয়তনের তুলনায় ধান চাষের জমির আয়তন কম এবং হাওরের গভীরতা বেশি সেখানে মাছের মৃত্যু তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।

অন্যদিকে যে সমস্ত হাওরের মোট আয়তনের তুলনায় ধান চাষের জমির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি এবং হাওরের গভীরতা কম সেখানে মাছের মৃত্যু বেশি হয়েছে। অর্থাৎ ধান পঁচে যাওয়ার কারণেই যে মাছের মড়ক লেগেছিল তা স্পষ্টত উপলব্ধি করা যায়।

মাছের মৃত্যুর পাশাপাশি হাঁসের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হলে দেখা যায়, হাওরের বোরো ধান খেতে প্রচুর পোকামাকড় জন্মায়, এগুলোর মাঝে অনেক বিষাক্ত পোকামাকড়ও থাকে। বিষাক্ত পোকামাকড়গুলো খাওয়ার কারণে হাঁসের মৃত্যু হতে পারে। হালির হাওর (হাইলের হাওর নয়) থেকে পাওয়া মৃত হাঁসের রক্ত পরীক্ষা করে রক্তে কোনো বিষাক্ত দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
ধানের পচনে বড় মাছের ব্যাপক মৃত্যু হয়েছে কিন্তু হাওরে এখনও ১৯ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণির পোনাও পাওয়া গেছে। যা হাওরের জলজ প্রাণীর বৈচিত্র্যতার উপস্থিতি প্রকাশ করে।

এর আগে মাছের মড়কের সঠিক কারণ নির্ণয় ও পানির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ করে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ২৪ এপ্রিল হাওরে যায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের বিশেষজ্ঞ দল। বিশেষজ্ঞ দলের আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক।

৬ সদস্য বিশিষ্ট “মাছের মড়ক পর্যাবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী টিম” এর অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মাছ চাষ বিভাগের অধ্যাপক ড.এস.এম. রহমত উল্লাহ, ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড.এ.কে.এম. নওশাদ আলম, মাছ চাষ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী রেজা ফারুক, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.কে. শাকুর আহম্মদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।