ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিকাশের মোবাইল পরিবর্তন করে অভিনব প্রতারণা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
বিকাশের মোবাইল পরিবর্তন করে অভিনব প্রতারণা গ্রেফতার প্রতারণা চক্রের সদস্যরা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রথমে কাস্টমার সেজে বিকাশের এজেন্টের দোকানে যায় প্রতারক চক্র। এই সুযোগে ওই দোকানির বিকাশে ব্যবহৃত মোবাইলটি দেখে তারপর হুবহু একটি পুরাতন মোবাইল সেট সংগ্রহ করে তারা। অন্য কোন দিন ওই চক্রের একজন সেই দোকানে গিয়ে কৌশলে বিকাশে ব্যবহৃত মোবাইলটি হাতে নেয়। কাছে থাকা একই রকম মোবাইলটি মুহূর্তের মধ্যে দোকানিকে গছিয়ে আসল মোবাইল ফোনটি নিয়ে সটকে পড়ে তারা।
 

চক্রের কেউ এমন পারদর্শী যে, দূর থেকে কেউ মোবাইলে নাম্বার টিপলে, সেই আঙুল ঘোরানো দেখেই বলে দিতে পারে কোন নাম্বারটি চেপেছেন। এভাবেই বিকাশের মোবাইল চুরির আগে এজেন্টের পাসওয়ার্ডটিও জেনে নেয় তারা।

তারপর স্বল্প সময়ের মধ্যেই ব্র্যাক ব্যাংকের কোন এক এটিএম বুথ থেকে ওই বিকাশ নাম্বারের সব টাকা তুলে নেয়া হয়।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে এমন একটি চক্রের এক নারীসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন অভিনব প্রতারণার তথ্য বেরিয়ে আসে বলে জানিয়েছেন মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন-আব্দুর রহমান রিপন (২৬), আব্দুল আওয়াল খান রনি (৪৫), দানেজ উদ্দিন (২৬), টিটো (২২) ও নাহিদা সুলতানা পুষ্প (২৪)।

এসআই মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকার আলমগীর নামের এক দোকানির মোবাইল চুরি করে বিকাশ একাউন্টের সব টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করি। বুধবার সন্ধ্যায় (২৬ এপ্রিল) এই চক্রের প্রধান রিপনসহ ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তারা আলমগীরের দোকান থেকে মোবাইল চুরি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে ওই দোকান থেকে চুরি হওয়া সিম্ফোনি মোবাইল সেটটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

‘শারমিন লন্ড্রি’ নামের দোকানের মালিক আলমগীর ব্যবসার পাশাপাশি বিকাশে টাকা লেনদেন করতেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৪ মার্চ রাত ৮টার দিকে এক নারী দোকানে এসে বলে, ‘আমার হাজব্যান্ড টাকা পাঠাবে, সে ফোন দিয়ে নাম্বারটা কনফার্ম করবে। ’ সঙ্গে সঙ্গে আমার বিকাশ নাম্বারে একটা কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী লিজাকে চান। আমি ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করি, ‘আপনি লিজা কি না?’ তখন তিনি ফোন নিয়ে কথা বলেন। কথা শেষ করে মোবাইলটি ফেরত দিলে আমি মোবাইলটি ড্রয়ারে রেখে দিই।

কিছুক্ষণ পর অন্য কাস্টমার আসলে আমি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি এটি আমার মোবাইল না। তখন আমার বিকাশ নাম্বারে কল দিয়ে ওই নারীকে বলি, ‘আপনি আপনার মোবাইল দিয়ে আমার মোবাইল নিয়ে গেছেন, মোবাইলটা দিয়ে যান। ’ কিন্তু সে আর আসেনি।  

আমার মোবাইলের এজেন্ট নাম্বারে ৮৪ হাজার ৮৬৮ টাকা এবং অপর একটি সিমে বিকাশের পার্সনাল নাম্বারে ৬ হাজার ৭৮২ টাকা ছিল। এজেন্ট নম্বরটির টাকা সঙ্গে সঙ্গে উঠানোর পরও সেখানে ছিলো মাত্র ১২৭ টাকা। আর পার্সনাল নম্বরটিতে অবশিষ্ট ছিলো মাত্র ৬ টাকা। গ্রেফতার নাহিদা সুলতানাই সেদিন লিজা নামে তার দোকানে গিয়েছিল বলে চিহ্নিত করেন তিনি।

এসআই মতিউর রহমান বলেন, দলনেতা রিপন খুবই দক্ষ। মোবাইল আড়াল করে নাম্বার চাপলেও আঙুল ঘোরানো দেখে বুঝে যায় কোন নাম্বার চেপেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণা করে আসছিল। তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
পিএম/আরআর/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।