ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মঞ্চ মাতালো ‘নাক কাটা রাজা’ ও ‘টুনটুনি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
মঞ্চ মাতালো ‘নাক কাটা রাজা’ ও ‘টুনটুনি’ নাক কাটা রাজা ও টুনটুনি মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। সব বাতি নিভে গেছে। নিভু নিভু ক্ষীণ আলো আরো খানিকটা বেড়ে মঞ্চ আলোয় পূর্ণ হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আলোকিত মঞ্চ।

মঞ্চের একদিক থেকে ১৪ জন শিশু হেঁটে আসছে। পরনে ওদের সাদা-কালো পোশাক।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে চলমান বাতিঘর শিশু-কিশোর নাট্যোৎসবের একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এটি।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হওয়া  নাট্যোৎসবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতার নাট্যরুপের মঞ্চায়ন চলছিল তখন।

পিন-পতন নীরবতায় বাতিঘরের বাতিদের উচ্চারণ- ‘মানুষেরে ঘৃণা করে কারা ওরা’  শুনে শিউড়ে ওঠেন মিলনায়তন ভর্তি দর্শকরা। মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকা দর্শকদের নিঃশ্বাসও যেন স্তব্ধ।

নাটক চলছে। ঠোঁট মেলাচ্ছে শিশুরা। এতোটুকু ভুল নেই। মানুষ কবিতার মাধ্যমে ধর্মের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভেদাভেদের করুণ চিত্র তুলে ধরা হলো মঞ্চে।

কখন যে এ পরিবেশনা শেষ হয়েছে, বুঝতেও পারেননি দর্শকরা। সম্বিত ফিরে পেয়ে তাদের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।

মঞ্চের কাঠবিড়ালিরা নিখুঁত সাজসজ্জা ও অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছে ‘খুকি ও কাঠবিড়ালি’।  ছবি: জি এম মুজিবুর বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ নাট্যোৎসবে তিনটি শাখার ১০টি ব্যাচের শিশুরা  ছয়টি নাটক ও পাঁচটি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করছে পর্যায়ক্রমে।

ফের উপস্থাপক মঞ্চে। পরবর্তী বাতিদলকে অনুরোধ জানানো হলো তৈরি থাকতে। মঞ্চে আহ্বান জানানো হলো কথাসাহিত্যিক আনিসুল হককে।

ছোট ছোট বাচ্চারা কিভাবে এতোটা সুন্দর অভিনয় করতে পারে, তা নিয়ে বিস্মিত আনিসুল হক। আগামী দিনের বাংলাদেশে গড়ার সৈনিকদের তিনি দেখতে পান এই শিশুদেরই মাঝে।

ফের অডিটরিয়ামের আলো বন্ধ।

করতালির ঝঙ্কার পূর্ণ মিলনায়তন। হঠাৎ বেজে উঠল বীণের শব্দ। মঞ্চে তখন ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী একদল শিশু বেদে- বেদেনি সেজে এসেছে। তাদের পোশাক- সাজসজ্জা যেন বাস্তবের বেদে-বেদেনিদেরই প্রতিচ্ছবি। নেপথ্যে বাজছে, ‘বাপুরাম সাপুড়ে, কোথা যাস বাপুরে, আয় বাবা দেখে যা, দুটো সাপ রেখে যা’।

দর্শক সারিতে থাকা কারো পা দুলছে গানের সঙ্গে সঙ্গে, কেউবা ধরেছেন সুর। কারো আবার গালে হাত। সাপ ঢুস ঢাস না কাটলেও মঞ্চের ক্ষুদে সাপুড়েদের পরিবেশনায় মুগ্ধ দর্শকরা আরও পরিবেশনার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন মুহূর্মুহু।

সাপুড়েদের মোহনীয় মঞ্চায়ন শেষ হতে না হতেই মঞ্চে হাজির কাঠবিড়ালিরা। পিঠফুঁড়ে যেন বের হয়েছে  বিশাল লেজ। আছে সাদা-কালো গোফ। কেউবা খেলো বাতাবি লেবু, কেউবা আবার নাচলো নিজের মতো।

এবারের আকর্ষণ আরও মজার। মঞ্চে একটি বড়সড়ো লাল চেয়ার। মাথায় মুকুট, গায়ে সেরওয়ানি পরে বসে আছেন মহারাজ। পাশেই রয়েছেন মন্ত্রী। টুনটুনি পাখির আওয়াজে বিরক্ত মহারাজ। চলছে নাটক ‘নাক কাটা রাজা’র মঞ্চায়ন।


সাদা গেঞ্জি আর কালো পাজামা পরা পাইক-পেয়াদাদের দিয়ে রীতিমতো পাকড়াও টুনটুনি পাখি। চার রানির কাছে সোপর্দ করা হলো রান্নার জন্য। কিন্তু টুনটুনিতো ফুরুৎ!

চার রানি ব্যাঙ ভাজা দিলেন রাজাকে। খেয়ে রাজার বেহালদশা। টুনটুনির বেজায় আনন্দ।

মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূরের আহ্বান ‘মানুষ’ কবিতার নাট্যরুপেকরতালিতে ফেটে পড়ছে মিলনায়তন। হাসিতে হাসিতে মুখর হয়ে উঠছে শিশু একাডেমী।

ফের টুনটুনিকে আটক তো করা হলো। কিন্তু এবার টুনটুনিকে তলোয়ারে কাটতে গিয়ে কাটা গেলো রাজার নাক। হয়ে গেলেন ‘নাক কাটা রাজা’।

‘নাক কাটা রাজা’ আর ‘টুনটুনি’র প্রসংসায় পঞ্চমুখ দেশে খ্যাতিমান অভিনেত্রী শাহনাজ খুশী। বললেন, ‘২৫ বছর পর বাতিঘরের শিশুদের অভিনয় দেখে আমার সব অর্জনকে ছোট বলে মনে হচ্ছে।

তার মতোই বাতিঘরের শিশুদের অভিনয়-নাচ দেখে সমান মুগ্ধতা তখন সব দর্শকের চোখে-মুখে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
ইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।