শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ভাটারা ১০০ ফুট রাস্তার পাশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে মতবিনিময় সভা করে তারা এ হুঁশিয়ারি দেন।
সভায় বক্তারা আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ৩ মে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কী সিদ্ধান্ত হয় সে পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন।
সভায় বক্তারা ঘোষণা দেন, বাপ-দাদার ভিটা রক্ষায় প্রয়োজনে তারা বুকের তাজা রক্ত দেবেন। এরপরও সেখান থেকে কেউ তাদের উচ্ছেদ করতে পারবে না। তাদের কেউ রোহিঙ্গা, উদ্বাস্তু কিংবা বিহারি মনে করলে ভুল করবেন। তারা এখানকারই স্থায়ী বাসিন্দা। যেকোনো মূল্যে তারা ঢাকার জেলা প্রশাসক এবং রাজউক চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্রমূলক উদ্যোগ প্রতিরোধ করবেন।
ভাটারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল আমিন খন্দকারের সভাপতিত্বে ওই সভায় দল-মত-নির্বিশেষে কয়েক হাজার এলাকাবাসী উপস্থিত হন। সভায় যেকোনো মূল্যে ১৩৮ নম্বর এলএ কেসের আওতাধীন সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য বাস্তুভিটা রক্ষা এবং জমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, এরশাদ সরকারের সময় যেমন অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন করে দাবি আদায় করা হয়েছিল এবারও সেভাবে আন্দোলন করা হবে। তখন শহীদ রায়হানের রক্ত বৃথা যায়নি। যার কারণে নতুন বাজারের এক সভায় তখনকার প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ এলাকাবাসীর বাড়িঘর অবমুক্ত করে দিয়েছিলেন।
স্থানীয় আওয়ামী নেতা মারফত আলী বলেন, ‘অতীতে বাড্ডা, নতুনবাজার, ভাটারা, খিলবাড়িরটেক, নয়ানগর, কালাচাঁদপুর, জোয়ার সাহারা, খিলক্ষেত, কুড়িল, কুড়াতলী এলাকার অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি দু’জন প্রেসিডেন্ট অবমুক্ত করে চিঠি ইস্যু করেছিলেন। এখন সেই সম্পত্তি অবমুক্ত নয় বলে ডিসি এবং রাজউক চেয়ারম্যান বলছেন। তাহলে আমরা কি প্রশ্ন করতে পারি না, এ দেশে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বড় না ডিসি-চেয়ারম্যান বড়? হয়তো তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করছেন। হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানেন না। জানলে অবশ্য ওদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ’
স্থানীয় মেম্বার ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অধিগ্রহণের জাঁতাকলে পড়ে আর কত নিগৃহীত হবো। একসময় বনানীতে ছিলাম। এরপর গুলশানে আসলাম। গুলশান থেকে বিতাড়িত করে ভাটারা, বাড্ডা কিংবা জোয়ার সাহারা পাঠানো হলো। এখন সেখান থেকেও আমাদের বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। শেষ সম্বল রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আমরা রাস্তায় নামবো। ’
স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল্লাহ বলেন, ‘জমি অবমুক্ত করার পর আমরা রাজউক থেকে নকশা নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছি। নিজেদের নামে নামজারি করে খাজনা পরিশোধ করে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে সবাই বসবাস করছি। অথচ ডিসি এবং রাজউকের চেয়ারম্যান হঠাৎ করে আমাদের সুখের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। তারা কোন আইনে আমাদের জমিজমা অধিগ্রহণকৃত বলে নতুন ফতোয়া দিচ্ছেন, সেটা আমাদের জানা নেই। তবে এ নিয়ে তারা বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরাও তাঁদের অপসারণ এবং বিচার চেয়ে রাজপথে নামব। ’
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ভাটারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, স্থানীয় কাউন্সিলর ওসমান গনি, আবদুল গাফফার মেম্বার, ডা. আলাউদ্দিন, সিদ্দিকুর রহমান, ফজলুর রহমান, আবদুল আজিজ ও মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ। তারা প্রতিদিন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে তাতে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
জেডএস