ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্নে প্রেমিককে নিয়ে স্বামী-সন্তান খুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৭
নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্নে প্রেমিককে নিয়ে স্বামী-সন্তান খুন অভিযুক্ত আরজিনা ও শাহিন

ঢাকা: উত্তর বাড্ডার ময়নারনগর এলাকার একটি বাসার নিচতলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন গাড়িচালক জামিল শেখ। তখন ওই বাসার তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া শাহিন মল্লিকের সঙ্গে পরিচয় হয় জামিলের স্ত্রী আরজিনার।

শাহিন সবসময় আরজিনার প্রশংসা করতো এবং একসময় দু’জন দু’জনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ভালো লাগা থেকে দু’জন সম্পর্কে জড়িয়ে যান।

তখন থেকে আরজিনার সঙ্গে যেকোনো ছোটখাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো জামিল শেখের।

বৃষ্টির কারণে বাসার নিচে পানি জমে যাওয়ায় রাগ করে আরজিনা বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে নতুন বাসা নেওয়ার শর্তে আরজিনা স্বামীর কাছে ফিরে আসেন এবং একই এলাকায় আরেকটি বাড়ির চিলেকোঠায় সাত হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নেন জামিল শেখ।

তখন আরজিনা কৌশলে পূর্ব পরিচিত হিসেবে প্রেমিক শাহিনকে তিন হাজার টাকায় সাবলেট নেন। পুলিশের ভাষায়, শাহিন তার স্ত্রী মাসুমাসহ সাবলেট হিসেবে উঠলে আরজিনা ও শাহিনের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়।

শনিবার (০৪ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বাড্ডায় বাবা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয় জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শাহিনের স্ত্রী মাসুমা অন্যের বাসায় কাজ করতো আর আরজিনার স্বামী জামিল সকাল বেলা কাজে বের হয়ে যেতো। তখন শাহিন ও আরজিনা ফোন ছাড়াই কথা বলতে পারতো। ইচ্ছেমতো কাছে আসতে পারতো।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাঠের টুকরা ও গামছা

তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিসি বলেন, শাহিনকে কাছে পেতে নতুন কৌশল অবলম্বন করে আরজিনা। একপর্যায়ে আরজিনা জামিলকে তালাক দিয়ে শাহিনের সঙ্গে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শাহিন তাকে তালাক না দিতে বলেন এবং দু’জন মিলে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

১ নভেম্বর রাতে একই বিছানায় শুয়ে ছিল জামিল, আরজিনা, নুসরাত ও তার ছোট ভাই আলভি। আরজিনা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের দরজা খুলে ঘুমায়। তখন শাহিন বাড়ির নিচ থেকে একটি কাঠের টুকরা এনে ঘরে ঢুকে জামিলের মাথায় আঘাত করে। প্রথম আঘাতের পর জামিল উঠে যায় এবং জিজ্ঞেস করে কেন তাকে আঘাত করা হল। এরপর শাহিন কোনো কথা না বলে আরও কয়েকটি আঘাত করে তাকে হত্যা করে। এসময় ঘুম থেকে জেগে উঠে মেয়ে নুসরাত। সে শাহীনের কাছে বাবাকে কেন মারা হলো তা জানতে চায় এবং চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে।

তখন নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে শাহিন। তবে প্রথমবার এতে আরজিনা সম্মতি দেয়নি। পরবর্তীতে বিপদে পড়ার আশঙ্কায় মেয়েকে হত্যার সম্মতি দেয় মা আরজিনা। তখন নুসরাতকে ঘরের বিছানায় ফেলে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করে শাহিন। তবে নুসরাত চিৎকার করায় তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়।

দুই হত্যাকাণ্ডের পর ছাদে শাহিন ও আরজিনা গল্প সাজাতে থাকে। একপর্যায় তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে কেউ জিজ্ঞেস করলে ডাকাতরা জামিল ও তার মেয়েকে হত্যা করেছে বলে বলবে। এছাড়াও ডাকাতরা যাওয়ার সময় তাকে ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করবে আরজিনা। এই নাটক বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সারারাত ছাদের সিঁড়ির সামনে মুখ গোমড়া করে বসেছিল আরজিনা। সেই ভোরেই স্ত্রী মাসুমাকে নিয়ে খুলনায় পালিয়ে যায় শাহিন।

ডিসি জানান, এঘটনায় তদন্তে আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা শিশুও কিছু তথ্য দিয়েছে। সব মিলে এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই দু’জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

২ নভেম্বর সকালে ময়নারবাগের ৩০৬/পাঠানভিলার ৩ তলার ছাদের ভাড়া বাসা থেকে জামিল (৩৮) ও মেয়ের নুসরাতের (৯) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সন্দেহজনকভাবে আরজিনাকে আটক এবং পরে গ্রেফতার দেখানো হয়। আরজিনার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর খুলনা থেকে শাহিনকে গ্রেফতার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৭
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।