দিনে রোদের উত্তাপ অনেক কমে গেছে। সন্ধ্যায় একটু গরম কাপড় পরেই বের হতে হচ্ছে রাস্তায়।
আর সেই শিশিরবিন্দুতে সকালের সোনাঝরা রোদ হীরার কুচির মতো দ্যুতিময় হয়ে ছড়াচ্ছে তার সাতরঙ বর্ণালি। শহর কিংবা গ্রামাঞ্চল সবখানেই শীতের আমেজ পুরোদমে উপভোগ করছেন মানুষজন। তাই এরই মধ্যে চারিদিকে শুরু হয়ে গেছে শীতবুড়িকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি। পাশাপাশি এবার শীত কেমন পড়বে তা নিয়েও শুরু হয়ে গেছে নানান জল্পনা।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজশাহী অঞ্চলে দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঋতু পরিক্রমায় শীত আসতে এখনও এক মাস বাকি থাকলেও রাজশাহীতে এখনই পাওয়া যাচ্ছে শীতের আমেজ।
পরিবারের লোকজন বাক্সবন্দি করে রাখা লেপ তোষক বের করছে ঠিক করার জন্য। আবার কেউ নতুনভাবে তৈরি করাচ্ছেন। মানুষের শরীরের কাপড়ে পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর ধুনকররাও। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ফিরে ধুনকররা তৈরি করেছেন লেপ-তোষক।
বিশেষ করে গত দু’দিন ধরে পাখিডাকা ভোরে ধুনকররা তুলা, কাপড় ও ধুনার নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। কেউ সাইকেলে, কেউবা ভ্যানে আবার কেউবা পায়ে হেঁটে ঘুরছেন মহানগরের গলিতে-গলিতে। সকাল থেকে দুপুর অব্দি একটি বাড়িতে লেপ বা তোষক তৈরি করলেও অর্ডার নিচ্ছেন পরের দিনের।
ধুনকরের টুং-টাং আওয়াজ আর বাতাসে উড়ে বেড়ানো তুলা জানিয়ে দিচ্ছে শীত আসছে। ফলে মহানগরের তুলাপট্টি নামে খ্যাত গণকপাড়ার লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতেও অতিরিক্ত কারিগর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি দোকানেও কাজ চলছে পুরোদমে। তাদের ব্যস্ততার যেনো শেষ নেই।
রাজশাহীর গণকপাড়া মোড়ের ধুনকর জাব্বার আলী জানান, এক সপ্তাহ আগেও তেমন কাজ-কর্ম ছিল না। কিন্তু গত সপ্তাহের বৃষ্টিপাত ও ভোরের হালকা কুয়াশায় শীতের আমেজ বিরাজ করছে। এতেই লেপ তৈরির অর্ডার দেওয়া-নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। দোকানের আসার পর আজই ১৪টি অর্ডার মিলেছে বলে জানান জব্বার আলী।
অপর ধুনকর আবুল হোসেন বলেন, এখন কেবল শুরু। আর ক’দিন পর রাত-দিন সমানতালেই কাজ করতে হবে। বর্তমানে পুরোনো লেপ নতুনভাবে তৈরির অর্ডারই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সেই সাথে গার্মেন্টসের তুলা দিয়ে তৈরি করা লেপও বিক্রি হচ্ছে। যার বিক্রি মূল্য সিঙ্গেল ৬শ’ টাকা। আর ডাবল লেপ ১২শ’ ৫০ টাকায়। এছাড়া ভালো শিমুল তুলা দিয়ে নুতনভাবে একটি সিঙ্গেল লেপ তৈরি করতে খরচ পড়ছে ১১শ’ টাকা, আর ডাবল লেপ তৈরিতে খরচ হচ্ছে ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা। আর সিঙ্গেল তোষক ৭শ’ টাকা এবং ডাবল ১৩শ’ টাকা দিয়ে তৈরি করানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গণকপাড়া এলাকার ধুনকর মনু মিয়া বলেন, একটি লেপ তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এভাবে একজন কারিগর দিনে গড়ে ৫ থেকে ৬টি লেপ তৈরি করতে পারেন।
দিনে ৫ থেকে ৬টি তোষক তৈরিতেও একই সময় ব্যয় হয়। তুলা ও কাপড়ের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার লেপ তোষকে ১শ’ থেকে ১শ’ ৫০ টাকা বেশি লাগছে। এছাড়া বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে কারিগরদের মজুরিও বেড়েছে। এরপরও শীত নিবরণের জন্য মানুষ আগে থেকেই অর্ডার দিচ্ছে। সামনে সপ্তাহ থেকে কাজের চাপ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়:১৮৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এসএস/জেএম