রোববার (৫ নভেম্বর) খুলনার বয়রা আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের বড় চাচা পুলিশ সদস্য জুয়েল রানা বাংলানিউজকে বলেন, যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিশুটির জন্ম হয়। জন্মের পরই শ্বাসকষ্ট হয়ে পেট ফুলে যাচ্ছিল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন টেস্টে ধরা পড়ে তার পরিপাকতন্ত্রের নিচের অংশ বন্ধ। আর উপরের অংশ পচে গেছে। যে কারণে পেটটা ফোলা। ডাক্তাররা বললেন অপরারেশন করতে হবে। তারপর অপারেশন করা হয়। আমরা কখনও ভাবিনি চিকিৎসা করাতে পারবো। এখানের ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিক সেবায় শিশুটি বেঁচে থাকায় আমরা খুবই খুশি।
খুলনার আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক (শিশু বিভাগ) মো. বেল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টায় শিশুটি জন্ম নেয়। দুই হাসপাতাল ঘুরে আমাদের কাছে আসে ৩০ অক্টোবর রাত ২টার দিকে। তখন থেকেই আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়। বাচ্চার বাবার নাম বাহারুল ইসলাম। মায়ের নাম মিসেস সালমা। গ্রাম যশোরের রূপদিয়া।
তিনি বলেন, বাচ্চাটি ৩৪ সপ্তাহে জন্ম নিয়েছে। মাত্র ২.২ কেজি ওজন নিয়ে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয়। ওজন কম ও অপরিপক্বতার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় তাকে যশোর ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার পর্যাপ্ত সাপোর্ট তারা দিতে পারছিল না। শেষে পরিবারের লোকজন খোঁজ নিয়ে আমাদের এখানে এলে তাকে ভর্তি করি। তখন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ছিল। এক পর্যায় তাকে লাইফ সাপোর্ট (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) দেওয়া হয়। সেই অবস্থায় আমরা তার পেটের এক্স-রেতে দেখতে পাই আরও একটি সমস্যা রয়েছে।
‘শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে এসেছিল, পরে আমরা দেখতে পাই তার পেট ঠিকমতো কাজ করছে না। পরিপাকতন্ত্রের শেষের অংশটি জন্মগতভাবে বন্ধ রয়েছে। উপরের অংশটি ক্রমশ ফুলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা একজন শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন এইচ এম জাফর শরীফের শরণাপন্ন হই। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জন। উনি আসার পর দ্রুত নির্ণয় করা হয় নাড়ির একটি অংশ বন্ধ। লাইফ সাপোর্ট চলাকালেই তার অপারেশন করতে হবে। যদিও এটি খুব জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তবু আর কোনো উপায় নেই। ’
এই চিকিৎক আরও জানান, বাচ্চাটির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে অপারেশন করে পরিপাকতন্ত্রের উপরের পচা অংশ কেটে ফেলা হয়। ভালো অংশটি রেখে নতুন পথ করে দেওয়া হয়েছে। অপারেশন শেষে যখন আমরা তাকে এনআইসিওতে নিয়ে এসেছি তখনও তার লাইফ দেওয়া ছিল। ২৪ ঘণ্টা আমরা ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রেখেছি। সেখান থেকে বের করে তাকে অন্য একটি কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র দেওয়া হয়। এখনও সেটিতে আছে। এখন সে নিজে নিজে শ্বাস নিতে পারছে। আগের চেয়ে অনেক ভালো। আশা করছি অবস্থার এ রকম উন্নতি হলে আরও ২৪ ঘণ্টা অবজারভেশনে রেখে তাকে অন্য বাচ্চাদের মতো সাধারণ অক্সিজেন দিতে পারবো।
এ ধরনের অপরেশনের সফলতা পদ্মার এ পারে বিরল দৃষ্টান্ত বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এমআরএম/এএ