জানা যায়, পরিযায়ী পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, নিরাপত্তা ও আবাস-উপযোগী হওয়ায় অতিথি পাখি আসতে থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদের আসা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে।
ক্যাম্পাসে ছোট-বড় প্রায় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪টি লেকে অতিথি পাখির বিচরণ বেশি। চলতি বছর তিনটি লেকে অতিথি পাখি এসেছে বলে জানান প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ^বিদ্যালয় আ. ফ. ম কামালউদ্দিন হলের সামনে ও নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পেছনে যে লেকটি রয়েছে, এখন সেটির তিনভাগের দুই ভাগই ভরাট হয়ে গেছে। তাতে কচুরিপানা ও ঘাস জন্মেছে। লেকটি চারদিক থেকে ভরাট হয়ে সংকুচিত হয়ে গেছে। এই লেকটিতে সব থেকে আগে এবং সব থেকে বেশি পাখি বসতো বলে জানা গেছে।
একইভাবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে থেকে সুইমিং পুল পর্যন্ত যে লেকটি রয়েছে সেটির প্রায় পুরো অংশই ভরাট হয়ে গেছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে বড় লেকটিতে (সুইমিং পুলের উত্তর দিকে) এবছর সর্বপ্রথম অতিথি পাখি দেখা গেছে। সেটি মাছচাষের জন্য লিজ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। বড় লেক হওয়ায় দুই-তিন বছর কেউ এই লেকটি লিজ নেয়নি। যার কারণে লেকটি পাখিদের জন্য প্রচুর খাদ্যের উৎস ছিল। পাশাপাশি নিরাপদ হওয়ায় এখানে প্রচুর পাখির বিচরণ হয়। ছোট ডুবুরী পাখি দুই বছর ধরে এই লেকে দেখা যাচ্ছে। এরা সারা বছর এখানেই থাকে এবং বাচ্চা জন্ম দেয়।
এর আগে ক্যাম্পাসে এই পাখি দেখা যায়নি বলে জানান প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান। তিনি এই লেকটি লিজমুক্ত রাখতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসের অন্য যেসব লেক লিজ দেওয়া হয়, সেগুলোও পাখির বসবাসের উপযোগী করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
অতিথি পাখি আসা শুরু করলেও এদের নিরাপত্তার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, যে লেকগুলো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল, সেসবের বেশিরভাগই ভেঙে ও ছিঁড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি। একারণে অনেকে লেকের একেবারে কাছে গিয়ে পাখিকে রিরক্ত করেন, ভয় দেখান।
পাখিরা যাতে বিরক্ত না হয় বা উড়ে না যায় সেজন্য লেকগুলোর পাশে গাড়ির হর্ন বা ভেঁপু বাজানো, কোনো ধরনের বাঁশি বাজানো, উচ্চ শব্দ করা, মিছিল করা ইত্যাদি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা জারি করা হয়নি।
গত বছরের নির্দেশিকা সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুনগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে নির্দেশিকা সম্বলিত কোনো ব্যানার বা ফেস্টুন দেখা যায়নি।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ক্যাম্পাসের অন্যান্য বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, পুরো ক্যাম্পাসের যে কয়টি লেক রয়েছে সেগুলো লিজমুক্ত করে রাখা গেলে পাখিদের জন্য খুবই ভাল হতো। লিজ দিয়ে আর কত টাকা আয় হয়! কিন্তু অতিথি পাখি বেশি এলে পর্যটকের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি বিশ^বিদ্যালয়ের নাম ছড়াবে। মর্যাদাও বাড়বে।
একই সঙ্গে তারা বিশ^বিদ্যায়ের চৌরঙ্গী মোড় থেকে রেজিস্ট্রার ভবন পর্যন্ত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বহিরাগতদের গাড়ি ঢুকতে না দেওয়ার, তাদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের আলাদা ব্যবস্থা করার এবং পাখি চলে যাওয়ার পর ভরাট লেকগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা দুই বছর আগে লেক সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে তা আর করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া লেক সংস্কার করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই। তাই সরকার যদি সংস্কারের জন্য কোনো প্রকল্প দেয় তবেই তা করা সম্ভব হবে। লেকগুলো কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়া ও অন্যান্য বিষয়ে কাজ শুরু করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বড় লেকটি লিজমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
জেএম