রোববার (০৫ নভেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাহে রাজেউন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৫ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন মেয়ে ও পালিত এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আফাজের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাকে এক নজর দেখার জন্য অসংখ্য ভক্ত, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, কৃষি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।
আফাজ পাগলার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, আছরের নামাজের পরপরই তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪৫ বছর আগে নাটোরের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামে ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেন আফাজ উদ্দিন। পাশাপাশি কবিরাজি চিকিৎসাও শুরু করেন তিনি। এলাকার সবাই তাকে বলে আফাজ পাগলা নামে চেনে। তিনি নিজে ঔষধি গাছ চাষ করেই থেমে থাকেননি, অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করেছিলে ভেষজ উদ্ভিদ চাষে। প্রথমে কেউ গুরুত্ব না দিলেও ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, এটি লাভজনক। পরে অন্যরাও চাষে যুক্ত হন।
এভাবে ঔষধি গাছের চাষ বাড়তে থাকে খোলাবাড়িয়া গ্রামে। মিসরি দানা, ভূঁইকুমড়া, আলকুচি, তুলসি, হরতকি, আমলকি, বহেরা, বাসক, ঘৃতকাঞ্চন, শতমূলী, শিমুল, অশ্বগন্ধাসহ প্রায় ১৪০ প্রকারের ঔষধি গাছের চাষাবাদ করা হয় এখানে। আজ এ গ্রাম সারা দেশে ঔষধি গ্রাম হিসেবে পরিচিত।
এ গ্রামে উৎপাদিত এসব গাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান। ঔষধি গাছকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে ঔষধি বাজার। গ্রামবাসীর উৎপাদিত ভেষজ বাজারজাত করতে গড়ে উঠেছে সমবায় সমিতি।
নাটোর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ গ্রামের পথের দুই ধার ও জমিতে গাছ আর গাছ। কোনোটিই যেন তেন গাছ নয়, অনেক জটিল রোগ সারে এসব ভেষজ উদ্ভিদে। গাছের পরিচয়েই খোলাবাড়িয়াকে ডাকা হয় ‘ঔষধি গ্রাম’। ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছের বদৌলতে বদলেছে গ্রামটির নাম। বদলে গেছে পুরো গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা। বদলে গেছে তাদের চিন্তা চেতনা এবং কর্ম।
এখন ঔষধি গাছেই ঘুরছে গ্রামের ১৬শ’ পরিবারের অর্থনীতির চাকা। ‘ঔষধি গ্রাম’ এ নামে গ্রামটিকে পরিচিত করে তোলার নেপথ্যে রয়েছেন আফাজ উদ্দিন।
লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, কৃষিক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৯ সালে ‘চ্যানেল আই কৃষি পদক’ পেয়েছেন আফাজ পাগলা। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। অবসরে তিনি একাকি থাকতে পছন্দ করতেন। আধ্যাত্মিক গান গাইতেন তিনি। এছাড়া নিজের কবিরাজি চিকিৎসালয় থেকে নানা রোগের চিকিৎসা সেবা দিতেন তিনি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসতেন চিকিৎসা নিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
এসআই