সোমবার (০৬ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড আইন, ২০১৭’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন নামে মন্ত্রিসভায় তোলা হলেও ‘ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড আইন, ২০১৭’ নামে অনুমোদন হয়েছে। আগে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল বিধিমালা-২০০২ দ্বারা পরিচালিত হতো। তার পরিবর্তে এই আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সংজ্ঞাতে অভিবাসী অর্থ: বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যিনি কোনো কাজ বা পেশায় নিযুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশে গমন করেছেন এবং কোনো বিদেশি রাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
অভিবাসী কর্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যিনি অন্য কোনো রাষ্ট্রে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কর্মের উদ্দেশ্যে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বা গমন করছেন, কোনো কর্মে নিযুক্ত রয়েছেন বা কোনো কর্মে নিযুক্ত থাকার পর বা নিযুক্ত না হওয়ার পর দেশে ফেরত এসেছেন।
অভিভাসী এবং অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে এই আইন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রবাসীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, অভিবাসী ও অভিবাসী কর্মীদের প্রবাসী বলা হবে।
আইন কার্যকরে ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এর পরিচালনায় থাকবে ১৬ জনের পরিষদ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরার মহাপরিচালক, অর্থ বিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রতিনিধি, বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল বা বায়রার সভাপতি, সরকার কর্তৃক মনোনীত বিদেশ থেকে প্রত্যাগত একজন নারীসহ দু’জন অভিবাসী কর্মী সদস্য হিসেবে থাকবেন।
ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডের মহাপরিচালক হবেন পরিষদের সদস্য সচিব। মনোনীত সদস্যদের মনোনয়ন হবে তিন বছরের জন্য। কার্যালয় হবে ঢাকায়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুনত্ব হচ্ছে আগে বিধি দ্বারা চলতো, এখন আইন দ্বারা চলবে।
আইনে প্রবাসীদের কল্যাণার্থে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ ১২টি কাজ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীদের মৃতদেহ দেশে আনা, দাফন-কাফন, প্রবাসীদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া উল্লেখযোগ্য।
নারী অভিবাসীদের জন্য একটি বিশেষ বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদেশে কর্মরত কোনো নারী অভিবাসী কর্মী নির্যাতনের শিকার, দুর্ঘটনায় আহত, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বিপদগ্রস্ত হলে তাদের উদ্ধার ও দেশে আনয়ন, আইনগত ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশ্যে দেশে বিদেশে হেল্প ডেস্ক ও সেইফ হোম পরিচালনা করা।
এছাড়া দেশে প্রত্যাগত নারী অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। এটা বিশেষ বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
পরিচালনা পরিষদ প্রতি দুই মাসে একবার মিটিং করবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৬ জনের মধ্যে ৯ জন যদি উপস্থিত থাকেন তাহলে কোরাম হবে।
আর সভাপতির আপদকালীন বিশেষ ক্ষমতায় বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোনো আপদকালীন পরিস্থিতিতে জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সভাপতি যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। এজন্য কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে বোর্ডের পরবর্তী সভায় তার অনুমোদন নিতে হবে।
আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত বিধি দ্বারা চলবে। আইন পাস হয়ে গেলে বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। ক্ষতিপূরণ কেমন হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বোর্ডের একটি তহবিল থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান; বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন-২০১৩ এর অধীন সরকার কর্তৃক ফি, রিক্রুটিং এজেন্সির জমাকৃত জামানতের ওপর সুদ, সরকারের পূর্বানুক্রমে কোনো দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদান, বাংলাদেশ মিশনে যে কল্যাণ ফি আদায় হয় এর ওপর ১০ শতাংশ সারচার্জ, তহবিলের অর্থ বিনিয়োগে থেকে প্রাপ্ত মুনাফা, বোর্ডের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ইজারা-ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয়, অন্য কোনো বৈধ উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ।
আরও পড়ুন:
২০১৮ সালে সরকারি ছুটি ২২ দিন
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ