কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষিত, বিত্তবান ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের রোহিঙ্গা জাফর আলম দীপু সোমবার (৬ নভেম্বর) কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফোনে বাংলানিউজকে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের হাল-হকিকত জানান।
আগাম কোনো ঘোষণা না দিয়েই বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকাল ৯টায় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্বে থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে মংডুর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন সুচি।
হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে জাফরের মামা আলহাজ মোহাম্মদ ওসমানের গ্রামের পাশে বানানো হেলিপ্যাডে। জাফরের নানা আলহাজ মোহাম্মদ হায়দার ও তার পূর্বপুরুষ শত বছরেরও অধিক সময় ধরে ওই গ্রামে বসবাস করছেন।
জাফরের মামা একজন রোহিঙ্গা। তিনি সে এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সুচির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আলোচনায় তিনি দোভাষির কাজ করছিলেন। রাখাইনে প্রেন্ড প্রেং গ্রামে ওই আলোচনা সভা হয়। গ্রামটি পুরো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাফর বলেন, সুচির বক্তব্য সম্পূর্ণ মিডিয়ায় আসেনি। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, আমাকে সম্মান প্রদর্শন করার জন্য সর্বপ্রথম সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ গ্রামটি পুন:নির্মাণ করে দিতেই আমার এখানে আসা। কীভাবে গ্রামটি নির্মাণ করা হবে তার নকশা সঙ্গে নিয়ে এসেছি।
এ সময় একটি মানচিত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, মানচিত্রে কোনো ভুল থাকলে আপনারা গ্রামবাসীরা ঠিক করে নেবেন। গ্রাম নির্মাণের জন্য আপনাদের লোকজনকেই ব্যবহার করা হবে।
তিনি বলেন, এখানে কোনো প্রকার ভুল হয়ে থাকলে আপনারা সংশোধন করে নেবেন। নির্মাণ কাজে যেহেতু আপনাদের লোকজনই থাকছে, সুতরাং আমি মনে করবো আমাদের লক্ষে আমরা সফলভাবে পৌঁছুতে পারব। এ কাজ আপনাদের শান্তির জন্যই করা হচ্ছে। সকলের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সবাই মিলেমিশে থাকতে হবে। পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের আহবান জানাচ্ছি।
জাফর জানান, সুচির সফরের পর মিয়ানমার থেকে তার মামাসহ অনেকেই তাকে জানিয়েছেন, কবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে এবং কীভাবে নেবে সে সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেক রোহিঙ্গা, যারা এখনও বাংলাদেশে আসেনি এবং বাংলাদেশে যারা এসেছে সবাইকে এক কাতারে চিন্তা করে মিয়ানমার সরকার যাচাই-বাছাই করে কাজ শুরু করতে চায়।
জাফর বলেন, এখন ওখানে যারা রয়েছে তাদেরও সম্ভবত চলে আসতে হবে যাচাই-বাছাই করার জন্য। নাহলে তাদের আইডিপি ক্যাম্পে (অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত শিবির) ঢুকতে হবে। বাঙালি নামে কার্ড নেওয়ার জন্য তাদের চাপ দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। ওই কার্ডকে এনভিসি বা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড বলা হয়। তাতে বাঙালি লিখলেই রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে মিয়ানমার।
বাংলাদেশে সময়: ০৪১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
কেজেড/জেডএম